এই সময়, গঙ্গারামপুর: সীমান্তে বাস, সমস্যা বারো মাস! কথাটা যে নেহাত কথার কথা নয়, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন সীমান্তের চাষিরা।
বাংলাদেশ অশান্ত। মন ভালো নেই এ পার বাংলারও। অভিযোগ, এমন পরিস্থিতিতে কাঁটাতারের ও পারের ভারতীয় চরের জমি থেকে ফসল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর, তপন, হিলি, বালুরঘাট, কুমারগঞ্জ, কুশমণ্ডি ব্লকের সীমান্তের চাষিদের ঘুম উড়েছে। চরের মাঠে এখন রয়েছে আমন ধান। এরপরে রবিশস্যের ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে বলেই আশঙ্কা চাষিদের। তাঁদের দাবি, বিএসএফ ও প্রশাসন বিষয়টি কঠোর হাতে মোকাবিলা করুক।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় ২৫২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। জেলার ৮টি ব্লকের মধ্যে ৬টি ব্লকেই রয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকা। সূত্রের খবর, সীমান্তে ১৫০ গজ এলাকা ছেড়ে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ায় প্রচুর কৃষি-জমি সীমান্তের ওপারে চলে গিয়েছে। সেই জমি নিয়েই সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। সীমান্তবাসীদের অভিযোগ, জমির ফসল তো লুট হচ্ছেই। সম্প্রতি হরিহরপুরে তেলিয়াপাড়াতে ইট-পাথর ছুড়ে বেশ কিছু বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে বাংলাদেশের দুষ্কৃতীরা। গত রবিবারেও কুমারগঞ্জের সমজিয়াতে জমির ফসল ও বাঁশের বেড়া পুড়িয়ে দিয়েছে তারা।
চাষিরা জানিয়েছেন, এ বছর আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে চরের জমি থেকে এক ছটাক ধানও ঘরে তুলতে পারেননি বহু চাষি। সব ধান কেটে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। সীমান্তের চাষি হামেদুর সরকার, তাপস রায়, বিবেক দাস, উদয় রায়েরা সমস্বরে বলছেন, ‘রাতের অন্ধকারে বিঘের পর বিঘা জমির ধান লুট হচ্ছে। বিএসএফ পাহারায় থাকলেও তারা কিছুই করতে পারছে না। এ দিকে, চাষের খরচ বেড়েছে, পরিশ্রম বেড়েছে। ফলে চাষ করে লাভ তো দূরের কথা, ধান বিনে তো না-খেয়ে মরতে হবে। এমন অত্যাচার চলতে থাকলে এরপরে আদৌ রবিশস্য চাষ করব কি না তা নিয়ে ভাবতে হবে।’
বাসুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রোশনারা খাতুন জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি বিএসএফ ও প্রশাসনকে জানিয়েছেন। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কিসান খেতমজুরের সভাপতি আবু হায়দার আলি বলেন, ‘এমনটা চলতে পারে না। বিএসএফ কড়া পদক্ষেপ করলেই সব বন্ধ হয়ে যাবে।’ বিজেপির গঙ্গারামপুরের বিধায়ক সত্যেন্দ্রনাথ রায় জানিয়েছেন, বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্তরে জানিয়ে সমস্যার সমাধান করা হবে। জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণা জানিয়েছেন, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
জেলার পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তাল বলেন, ‘কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে রাতের অন্ধকারে চরের জমি থেকে বাংলাদেশের দুষ্কৃতীরা ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাতে ওই দিকে গেলে বিএসএফ জওয়ানদের উপরেও হামলা হতে পারে। বিষয়টি স্পর্শকাতর। উপর মহলেও জানানো হচ্ছে।’