নীলাঞ্জন দাস, রায়গঞ্জ
একবার, দু’বার নয়, সারা সপ্তাহে তিনি অন্তত পঞ্চাশ বার ফোন করেছেন। রিং বাজেনি। কেউ ধরেননি। প্রতিবারই যান্ত্রিক কণ্ঠে শোনা গিয়েছে, ‘দ্য নাম্বার ইউ আর ট্রায়িং টু কল ইজ় নট রিচেবল।’ নাগাড়ে ফোন করে ও পারের ‘খবর’ না-পেয়ে ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে এ পারে।
বাংলাদেশে রয়েছে দুই দাদা। একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক। অন্যজন, জনপ্রিয় কাউন্সিলর। দুই সহোদরের খোঁজ না–পেয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন রায়গঞ্জের সঞ্জিত চক্রবর্তী। তিনি জানান, আগে নিয়মিত দাদাদের সঙ্গে কথা হতো। বর্তমানে বাংলাদেশ অশান্ত। অথচ তিনি অনেক দিন ধরেই দাদাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
পেশায় ব্যবসায়ী সঞ্জিত রায়গঞ্জের কসবা এলাকার বাসিন্দা। তাঁর দুই দাদার একজন, স্বপন চক্রবর্তী বাংলাদেশের দিনাজপুরের পীরগঞ্জ থানার অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক। অন্যজন, তরুণ চক্রবর্তী বাংলাদেশের বগুড়া এলাকার দত্তপাড়ার জনপ্রিয় কাউন্সিলর। দেশভাগের সময়ে সঞ্জিত ও সুরজিতকে নিয়ে ভারতে চলে আসেন তাঁদের বাবা রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও মা মায়ারানি। স্বপন ও তরুণ বাংলাদেশে জেঠুর কাছেই থেকে যান।
সঞ্জিত ও তাঁর দাদাদের মধ্যে যথেষ্ট সুসম্পর্ক রয়েছে। দু’দেশে নিয়মিত যাতায়াতও ছিল। বছর কয়েক আগেও বাংলাদেশ থেকে রায়গঞ্জে এসেছিলেন স্বপন ও তরুণ। ও পার বাংলায় দাদাদের বাড়িতেও যেতেন সঞ্জিত। টেলিফোনেও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। কিন্তু মাস দেড়েক থেকে ফোন করলে চেনা গলা নয়, শুধুই ভেসে আসছে— ‘নট রিচেবল’।
সম্প্রতি একটি সূত্রের মাধ্যমে সঞ্জিত জানতে পারেন, তাঁর দাদারা ভালো নেই। তাঁদের বাড়িঘরও নাকি ভেঙে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই খবর শোনার পর থেকে সঞ্জিতের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। তিনি বলছেন, ‘ফোনের সামান্য একটা রিং কিংবা মৃদু একটা হ্যালো-ও যে কত স্বস্তি দিত তা এখন বুঝতে পারছি। দাদাদের পরিবারের লোকজনের কোনও খোঁজ নেই। তাঁরা কী অবস্থায় আছে, আদৌ বেঁচে আছে কি না সেটাও জানতে পারছি না। খুব অসহায় লাগছে।’
সঞ্জিতের সংযোজন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে তা-ও না-হয় ছুটে গিয়ে একবার দাদাদের দেখে আসতাম। কিন্তু এখন তো সেই উপায়ও নেই। আমি চাই, খুব দ্রুত বাংলাদেশে শান্তি ফিরে আসুক। তা হলে আমার মতো বহু মানুষ একটু শান্তিতে বাঁচতে পারবে। এই দুশ্চিন্তা আর নিতে পারছি না।’