• জবা-সাগরিকা, দুই বোনের হাতে এবার নিরাপত্তার দায়িত্ব
    এই সময় | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • বাসুদেব ভট্টাচার্য, জামালদহ

    মনের জোর। লক্ষ্যে স্থির। এবং কঠিন সময়ে ভেঙে না পড়া। এই তিন মন্ত্রকে আঁকড়েই সব বাধা ডিঙিয়ে জয়ী হলেন দুই বোন। জবা রায় সদ্য যোগ দিয়েছেন বিএসএফে। আর সাগরিকা সিআইএসএফে। একসঙ্গে এমন জোড়া সাফল্যে রায় পরিবার তো বটেই, উচ্ছ্বসিত সারা গ্রাম। গ্রামের বহু মেয়ের কাছে জবা-সাগরিকা এখন ‘রোল মডেল’।

    মেখলিগঞ্জের জামবাড়িতে মা, বাবা ও তিন বোনের অভাবের সংসার। জবা বড়। সাগরিকা মেজো। বাবা পরিযায়ী শ্রমিক। মা অন্যের জমিতে কাজ করেন। ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। এমন অবস্থায় লেখাপড়া করা অনেকের কাছেই বিলাসিতা। কিন্তু রায় পরিবার বরাবর ছকভাঙা পথকেই বেছে নিয়েছেন। বাবা জয়গোবিন্দ রায় ও মা অঞ্জলি রায় সবসময়ে মেয়েদের বলেছেন, ‘স্বপ্নের সঙ্গে কখনও আপস করবে না। তার জন্য যা করার দরকার করবে। আমরা সবসময় পাশে আছি।’

    বাবা-মায়ের কথা রেখেছেন তিন মেয়েই। কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে সদ্য চাকরি পেয়েছেন জবা, সাগরিকা। রাখি এখন দশম শ্রেণির পড়ুয়া। মেয়েদের পাশে থেকেছেন মা-বাবাও। তিন মেয়ের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ জোগান দিতে বছরের বেশিরভাগ সময়ে কখনও কেরল, কখনও অন্ধ্রপ্রদেশে শ্রমিকের কাজ করেছেন জয়গোবিন্দ। অঞ্জলিও গেরস্তালি সামলানোর পাশাপাশি অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করেছেন। রায় দম্পতির একটাই পণ ছিল— যে ভাবেই হোক, মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতেই হবে!

    বাবা-মায়ের সেই হাড়ভাঙা পরিশ্রম বৃথা যেতে দেননি জবা, সাগরিকা। লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা নিয়মিত শরীরচর্চাও করেছেন। দুই বোন বলছেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই বুঝে গিয়েছিলাম, পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে মাঠেও পাশ করতে হবে। সেই জন্য লেখাপড়া এবং শরীরচর্চায় কখনও ফাঁকি দিইনি।’ ছোট বোন রাখি বলছে, ‘এ বার আমি কিছু একটা করতে পারলেই বাবা-মায়ের সব স্বপ্ন পূরণ হবে।’

    রায় পরিবারের দুই কন্যার সাফল্যের কথা মুখে মুখে রটে যেতে সময় লাগেনি। সারা গ্রামের লোক এখন ভেঙে পড়ছে ওই বাড়িতে। বাড়ি বলতে টিনের চালা দেওয়া একটি ঘর। বর্ষায় সেই জীর্ণ টিনের চাল বেয়ে বৃষ্টি পড়ে। তখন কোনওরকমে পলিথিন লাগিয়ে দিন কাটাতে হয়। সেই ঘরেই রাত জেগে স্বপ্ন বুনেছেন দুই বোন। মাসকয়েক আগে তাঁরা পরীক্ষায় বসেন। উত্তীর্ণ হন। নভেম্বরে ফিজিক্যাল ও মেডিক্যাল পরীক্ষাতেও পাশ করেন। তারপরেই স্বপ্ন চলে আসে হাতের মুঠোয়। আগামী মাস থেকেই দুই বোনের প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ার কথা।

    রায় দম্পতি বলছেন, ‘সব কৃতিত্ব মেয়েদের। ওরা কঠোর পরিশ্রম করেছে। তাই সফল হয়েছে।’ আর জবা, সাগরিকা বলছেন, ‘বাবা-মা না-থাকলে আমরা কিছুই করতে পারতাম না। বাবা-মাকে আর কাজ করতে দেব না। এখন থেকে দেশসেবার পাশাপাশি আমরা মা-বাবারও সেবা করব। পাশে থাকব বোনেরও।’

  • Link to this news (এই সময়)