অর্ঘ্য বিশ্বাস, গোরুমারা
২০২০ থেকে ২০২৪। টানা এই চার বছর ধরে গোরুমারার একমাত্র ভরসা অরল্যান্ডো। এতদিন সে-ই ছিল একাই একশো। এ বার গোরুমারার নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত করতে বাড়ানো হতে পারে প্রশিক্ষিত কুকুরের সংখ্যা। বিশেষ করে গন্ডারের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে অরল্যান্ডোর মতো বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত আরও একটি সারমেয়কে নিয়ে আসা হতে পারে।
উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ বিভাগের মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভি বলেন, ‘এই মুহূর্তে রাজ্যে ন’টি প্রশিক্ষিত কুকুরের মধ্যে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বনাঞ্চলে রয়েছে সাতটি প্রশিক্ষিত কুকুর। গোরুমারার ক্ষেত্রে আরও আরও একটি প্রশিক্ষিত কুকুরকে আনার ব্যপারে ভাবা হচ্ছে।’
জঙ্গল পাহারা, চোরাশিকার এবং বন্যপ্রাণ সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে বনদপ্তরের প্রশিক্ষিত কুকুরেরা৷ গভীর জঙ্গলে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে বনকর্মীরা ব্যর্থ হলে সেই সময়ে মুশকিল আসান করে প্রশিক্ষিত কুকুরেরাই। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনায় যার প্রমাণও মিলেছে হাতেনাতে। অরল্যান্ডোর কেরিয়ারে এমন সাফল্য এসেছে বহু বার।
উত্তরবঙ্গে গোরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের আওতায় রয়েছে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত অরল্যান্ডো। বেলজিয়ান ম্যালিনয় প্রজাতির ওই কুকুরটি ২০২০ সালে প্রথম গোরুমারায় কাজে যোগ দেয়। গোয়ালিয়রের বিএসএফ ডগ অ্যাকাডেমি থেকে তাকে আনা হয়েছিল। গোরুমারার জঙ্গলে একবার বাইসন শিকারের ঘটনা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। দেহের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে উধাও ছিল বাইসনের একটি পা-ও। অরল্যান্ডোকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই চোরাশিকারিকে খুঁজে বের করে সে। উদ্ধার হয় রান্না করা মাংস ও বাইসনের দেহাংশ।
বামনডাঙা এলাকায় একটি বাড়ি থেকে হরিণের শিং উদ্ধার করতেও বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে অরল্যান্ডো। গোরুমারায় তার সাফল্যের তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। চোরাশিকারিদের নিশানা থেকে গন্ডার বাঁচাতে কিংবা জঙ্গলে সন্দেহভাজন কারও খোঁজ করতে অরল্যান্ডোর বিকল্প মেলা ভার বলেই মনে করেন বনকর্মীদের একাংশ। দু’জন প্রশিক্ষিত বনকর্মী তার দেখভালের দায়িত্বে আছেন।
এক বনকর্মীর কথায়, ‘দীর্ঘ প্রায় চার বছর নাগাড়ে একাই ডিউটি করছে অরল্যান্ডো। সেই অর্থে তার কোনও ছুটি নেই। কাজের চাপও রয়েছে মারাত্মক। ক্ষণিকের ছুটি তো সকলেরই দরকার। তাই অরল্যান্ডোর কাজের চাপ কিছুটা কমাতে আরও একটি প্রশিক্ষিত কুকুর আনার পরিকল্পনা করছে বনদপ্তর।’
ন্যাফের মুখপাত্র তথা উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট পরিবেশবিদ অনিমেষ বসু বলেন, ‘জঙ্গলে বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় প্রশিক্ষিত কুকুরদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। অতিরিক্ত একটি প্রশিক্ষিত কুকুর এলে গোরুমারায় নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে।’
প্রসঙ্গত, ডুয়ার্সের বুকে বনদপ্তরের বিভিন্ন ডগ স্কোয়াড নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির হয়েছে বেশ কয়েকবার। চলতি বছরেও গোরুমারার মূর্তিতে ডগ স্কোয়াডের প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জঙ্গল পাহারায় এই প্রশিক্ষিত সারমেয়রা যাতে আরও ভালো ভাবে কাজ করার সুযোগ পায় সেদিকে নজর দিয়েছে বনদপ্তর। গোরুমারার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কুনকি হাতি, পায়ে হেঁটে বনকর্মীদের নজরদারির সঙ্গে সঙ্গে প্রশিক্ষিত কুকুরের নজরদারিও বেশ সাড়া ফেলেছে। এখন অরল্যান্ডো কবে নাগাদ দোসর পায়, সেটাই এখন দেখার।