প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের ফলাফলে দেখা গিয়েছে, শহুরে ভোটারদের ভোট পায়নি তৃণমূল। বিরোধী বিজেপির দাবি, ওই শহুরে ভোটারেরা ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে। সেই ভোটবাক্সে ভাঙন ধরাতে হলে দ্রুত শহর ও শহরতলিতে পদক্ষেপ করে ভোটব্যাঙ্ক ফেরাতে হবে শাসকদলকে। তাই নবান্নের তরফে এমন ‘কড়া’ পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস দেখাচ্ছেন পুর দফতরের আধিকারিকেরা।
দ্বিতীয়ত, পুরসভাগুলির ‘রাজনৈতিক সমীকরণ’ মাথায় রেখে এই ‘কৌশলী’ পদক্ষেপ করেছে শাসক তৃণমূল। ক্ষমতাসীন তৃণমূল কাউন্সিলরদের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় গোষ্ঠী-রাজনীতি রয়েছে। এই নতুন নিয়ম তৈরি করে সেই গোষ্ঠী-রাজনীতি খানিকটা হলেও নির্মূল করা যাবে বলে মনে করেন শাসক শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব।
পুর ও নগরন্নোয়ন দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, নতুন নিয়মে কাউন্সিলরদের ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এত দিন পুরসভার চেয়ারম্যানকে মাথায় রেখেই আবাসন তৈরির অনুমোদন দিত সংশ্লিষ্ট পুরসভা। সেই কমিটির নাম ছিল ‘বোর্ড অব কাউন্সিলর্স’। এত দিন তারাই আবাসন তৈরির অনুমোদনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিত। সেই কমিটিগুলি নবান্নের নির্দেশে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। তার বদলে নতুন করে আবাসন নির্মাণের অনুমতির জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। মূলত পুরসভার অফিসার এবং পদাধিকারীদের নিয়ে ওই কমিটি গঠন করা হবে। কাউন্সিলরদের সরাসরি কোনও ভূমিকা থাকবে না। নবান্নের একটি সূত্রের বক্তব্য, নতুন কমিটিতে পুরসভার এগ্জ়িকিউটিভ অফিসারের গুরুত্ব এবং ক্ষমতা দুই-ই বাড়ানো হচ্ছে। পদাধিকারবলে তিনিই কমিটির আহ্বায়ক হবেন। পুরসভার চেয়ারম্যান হবেন চেয়ারপার্সন। কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান ছাড়াও থাকবেন অর্থ বিভাগের আধিকারিক এবং ইঞ্জিনিয়ারেরা। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের পরামর্শ দিতে পারলেও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
পুর দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে যে ভাবে শহর এবং শহরতলিতে আইনকে পাত্তা না-দিয়ে বেআইনি নির্মাণ হয়েছে, তাতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সেই উষ্মা প্রকাশ করার পরেই পুর দফতর কাজ শুরু করেছিল। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহেই এই নিয়ম চালু হয়ে যাওয়ার কথা।’’ আবাসন নির্মাণ নিয়ে প্রচুর অভিযোগও জমা পড়েছে। সেই প্রেক্ষিতে এমন পদক্ষেপ ‘অবশ্যম্ভাবী এবং প্রয়োজনীয়’ বলেই মনে করেন পুর দফতরের আধিকারিকদের একাংশ।
গত মার্চ মাসে কলকাতা বন্দর এলাকায় নির্মীয়মাণ একটি বহুতল ভেঙে পড়েছিল। তাতে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জনের। ঘটনাচক্রে, ওই এলাকাটি কলকাতার মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। ফলে ওই ঘটনায় ‘চাপ’ বেড়েছিল তৃণমূলের উপর। তার পর বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার দাবিতে সরব হন বিরোধীরা। দেরিতে হলেও (অনেকে অবশ্য বলছেন, দেরি নয়। কারণ, বিধানসভা নির্বাচন এবং পুরভোটের এখনও সময় আছে) কলকাতা পুরসভা-সহ সব পুর এলাকায় কড়া নজরদারির বন্দোবস্ত করতে সক্রিয় হল রাজ্য সরকার।