আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিন হোক বা রাত ডাক পড়লেই বেরিয়ে পড়া। তারপর বাঘরোলের বিচ্ছিন্ন হওয়া শাবকদের উদ্ধার করে মায়েদের কাছে ফিরিয়ে দিতে চলে অপেক্ষা। কখনও-কখনও পাঁচ-ছ' ঘন্টা সময় লেগে যায় মাকে খুঁজে পেতে। তারপর যথা স্থানে রেখে আসে। শাবকের ডাক শুনে হাজির হয়ে শাবককে মুখে তুলে নিয়ে যায় মা বাঘরোল। এছাড়াও কচ্ছপ, প্যাঁচা, বিষধর সাপ উদ্ধার করে চলেছেন। বাড়িতে ইতিউতি তাকালে নজরে আসবে একের পর এক অসুস্থ প্যাঁচা, পাখির চিকিৎসা চলছে। সুস্থ হলে ফের তাদের ছেড়ে দেয়। বাগনানের পরিবেশকর্মী চিত্রক প্রামাণিকের এহেন কর্মকাণ্ডে বেজায় খুশি এলাকার মানুষজন থেকে জেলার পরিবেশকর্মীরা।
বাগনানের বাঙ্গালপুর, কালিকাপুর, আমতা সর্বত্র ছুটে যাচ্ছেন তিনি। বাগনানের চাঁদনি গ্রামে মায়ের সঙ্গে ঘুরছিল বাঘরোলের দু’টি বাচ্চা। কিন্তু কুকুরের তাড়ায় মা ছাড়া হয়ে দোকানে ঢুকে পড়ে। ডাক পড়ে চিত্রকের। মা বাঘরোলের অবস্থান খুঁজে পেতে প্রায় চার-পাঁচ ঘন্টা সময় লেগে যায়। তারপর সেখানেই রাখা হয় শাবকদের। মা বাঘরোল এসে মুখে তুলে নিয়ে যায়। কালিকাপুর গ্রামেও একি চিত্র। একটি বাঘরোলের বাচ্চা কোনভাবে মা ছাড়া হয়ে পড়ে। গ্রামবাসীরা উদ্ধার করে। এরপরেই চিত্রককে খবর দিলে অন্য পরিবেশ কর্মীদের নিয়ে ছুটে যায় এলাকায়। শাবককে নিয়ে মা বাঘরোলের উপস্থিতির জন্য পুরো দিন চলে যায়। শেষে সন্ধের দিকে অবস্থান খুঁজে পায়। শাবকটিকে ওখানেই রেখে অপেক্ষা করতে থাকেন। প্রায় এক ঘন্টা পর মা এসে শাবকটিকে মুখে তুলে নিয়ে যায়।
চিত্রকের কথায়, বাঘরোল রক্ষা করার পাশাপাশি ওদের শাবকদের রক্ষা করাটাও জরুরি। এমনিতেই বাঘরোলের সংখ্যা কমে আসছে। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জানতে পেরেই এলাকায় পৌঁছে যাই। তারপর শাবকটি অসুস্থ কিনা দেখা হয়। প্রয়োজনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এলাকা তন্নতন্ন করে মা বাঘরোলের অবস্থান খুঁজি। তারপর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি। বলছেন, 'ওই সময়টা জীবনের সেরা অধ্যায়। মা এসে মুখে তুলে সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছে এ দৃশ্য দেখলে কার না ভালো লাগে।' এভাবেই বন্যপ্রাণ রক্ষায় নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছে চিত্রক।