মনসুর হাবিবুল্লাহ, দিনহাটা: এখন ধানের বীজতলা রোপণের সময়। এক বিঘা জমিতে ধান চাষের জন্য বীজতলা তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন দিনহাটার হিতেন মোদক। চৌধুরীহাটের ঝিকরি বিএসএফ ক্যাম্পের পাশেই নালাতে বীজতলার জমি দেখেছিলেন তিনি। পাশেই থাকা ডোবা কচুরিপানায় ভরা। ডোবার ধারে পা দিতেই হড়কে পড়েন। গড়িয়ে একদম ডোবার মাঝে চলে যান। পিচ্ছিল কোনও জিনিস পায়ে লাগে তাঁর। মনে খটকা লাগে। ডোবায় শুয়েই হাত দিয়ে তোলার চেষ্টা করেন সেটি। বেশ ভারী ছিল। কেজি চারেক হবে বলে আন্দাজ করেন। কাদা লাগানো ওই জিনিসটির মাথায় লোহার চাকতি দেখেন। অদ্ভুত লাগছিল সেটির আকৃতি। কাছেই প্রহরায় ছিল বিএসএফ জওয়ান। তাঁকেও দেখান। তিনিও কিছু আন্দাজ করতে পারেননি। লোহার জিনিসটা বেচে দেবেন স্থির করেন। কিছু টাকা হবে, সেটা দিয়ে ভালো কিছু খাবেন একদিন।
ভারী ওই বস্তুটি বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য ডোবার জলেই ভালো করে ধুয়ে নেন। এরপর সেটি হাতে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হন। কিছুটা পথ এগতেই তাঁর ভাইপোর সঙ্গে দেখা হয়। কাকার হাতে অদ্ভুত একটা জিনিস লক্ষ্য করেন ভাইপো কাজল। খেয়াল করেন, তাতে লেখা পাকিস্তান। কোথায় পেলে, কাকার কাছে জানতে চাইলে হিতেন বিস্তারিত জানান ভাইপোকে। বিপদ হতে পারে বুঝে দেরি না করে হিতেন মোদক ভারী লোহার জিনিসটা নিয়ে ফের হাজির হন বিএসএফ ক্যাম্পে।
পাকিস্তান লেখা শুনে চলে আসেন বিএসএফের কর্তারা। মর্টার শেল বুঝতে দেরি হয় না তাঁদের। সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার পাশে গর্ত করা হয়। সেই গর্তে রাখা হয় মর্টারটি। চারিদিকে বস্তা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। লাল পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয়। সারা রাত সেখানেই ছিল শেলটি।
ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে ওঠেন হিতেন। কত বড় বিপদ থেকেই না বেঁচে গেলেন, ভাবতে থাকেন। সেই ভাবনায় রাতে ঠিকমতো খেতেও পারেননি। সকালে সামান্য ভাত খান। ভাবেন, ভাইপো যদি পাকিস্তান লেখাটা না দেখত তাহলে কি যে হতো। বাড়িতে মর্টার শেলটি নিয়ে এসে টুকরো করে বিক্রির পরিকল্পনা ছিল। চার কেজি লোহা বিক্রি করে ভালোই উপার্জন হতো। সেটা করতে গিয়ে কত বড়ই না বিপর্যয় ঘটত।
বুধবার মর্টারটি নিষ্ক্রিয় করে সেনাবাহিনী। কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসে ভুলেও আর হাত লাগাবেন না জানিয়েছেন হিতেন মোদক। বলেন, জমির কাছে ডোবায় পা রাখতেই পিছলে পড়ে যাই। লোহার কিছুতে পা লাগলে আঘাত পাই। কী সেটা জানার জন্য হাতে তুলে নিই। ভেবেছিলাম লোহাটা বিক্রি করলে ভালোই দাম পাব। তা দিয়ে একদিন ভালো কিছু খাব। ভাইপো কাজল পাকিস্তান লেখা আছে না দেখলে কী যে হতো ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
(হিতেন মোদক। ইনিই মর্টারটি খুঁজে পান। - নিজস্ব চিত্র।)