• আম্বেদকরকে অপমান শাহের, তোলপাড় দেশ, পদত্যাগের দাবি, ড্যামেজ কন্ট্রোলে মোদি
    বর্তমান | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: সংবিধানের ৭৫ বছরের গৌরবময় যাত্রা নিয়ে সরকারের জবাবি ভাষণের দায়িত্ব অমিত শাহের কাঁধে সঁপেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। আর সংসদের সেই মঞ্চেই বিতর্কের বিস্ফোরণ! ‘এক দেশ এক নির্বাচন’, মোদি সরকারের শিল্পপতি বন্ধু সংক্রান্ত অনিয়ম গ্যালারির বাইরে পাঠিয়ে মঙ্গল-বুধবার দিল্লির দরবার কাঁপিয়ে দিল একটিমাত্র ইস্যু—বাবাসাহেব আম্বেদকর। ভারতের সংবিধান প্রণেতাকে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বেফাঁস মন্তব্যে তোলপাড় শুরু হল দেশজুড়ে। দফায় দফায় মুলতুবি হল সংসদের দুই কক্ষই। একজোট বিরোধীরা দাবি তুললেন, আম্বেদকরকে অপমান করা হয়েছে। বিজেপির দলিত বিরোধী তথা মনুবাদী প্রকৃত রূপ প্রকাশ হয়ে পড়েছে। ইস্তফা দিতে হবে শাহকে। ক্ষমা চাইতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। পরিস্থিতি এ পর্যায়ে পৌঁছল যে, ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি। সরকারের তরফ থেকেও ভাষণের বিতর্কিত অংশ এবং পুরোটা পাশাপাশি প্রকাশ করে প্রমাণের চেষ্টা চলল, সেকেন্ড ইন কমান্ড মোটেই আম্বেদকরকে অসম্মান করেননি। 


    কী বলেছিলেন অমিত শাহ? কী বলেছেন অমিত শাহ? মঙ্গলবার বিরোধীদের আক্রমণ করতে গিয়ে তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য, ‘আজকাল এক ফ্যাশন হয়েছে। সারাক্ষণ আম্বেদকর... আম্বেদকর... আম্বেদকর...। এতবার যদি ঈশ্বরের বন্দনা করতেন, সাত জন্মের স্বর্গবাসের পুণ্য অর্জন হয়ে যেত!’ সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে এহেন ‘শাহি’ আক্রমণের জেরে ফুঁসছে গোটা দেশ। পরিস্থিতি ক্রমেই যে দলিত বিরোধী ইস্যুতে পরিণত হচ্ছে, সেটা বুঝেই মোদি নামেন ড্যামেজ কন্ট্রোলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কংগ্রেসকে আক্রমণ করে তাঁর পোস্ট, ‘মিথ্যা প্রচার করে কংগ্রেস যদি মনে করে তাদের পাপ গোপন করতে পারবে, সেটা ভুল। আসলে তো সংসদে অমিত শাহই কংগ্রেসের দ্বিচারিতা প্রকাশ করেছেন।’ তাতে অবশ্য বরফ গলেনি। রাজ্যসভায় অমিত শাহের বিরুদ্ধে ‘স্বাধিকার ভঙ্গে’র নোটিস দিয়েছেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। ওয়াক আউটও করে তৃণমূল। সেইসঙ্গে এক্স হ্যান্ডলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোপ, ‘বিজেপির দলিত বিরোধী, জাতপাতের মানসিকতা সামনে এসে গিয়েছে। অবশ্য যারা ঘৃণা আর ধর্মান্ধতাকে উস্কায়, তাদের থেকে কীই বা আশা করা যায়? ২৪০ আসন পেয়েই যদি বিজেপি এমন অপমান করতে পারে, তাহলে ৪০০ পেলে কী হতো?’ একই সুরে আক্রমণ করেন রাহুল গান্ধী। বলেন, ‘এই অপমান সহ্য করব না। সংবিধান বদলে দেওয়াই নরেন্দ্র মোদির লক্ষ্য।’ নজর করার মতো বিষয় হল, এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ আরএসএস’ও। সেটা বুঝেই বিরোধীরা আক্রমণ দ্বিগুণ করেছে। সংসদ চত্বরে রাহুল-প্রিয়াঙ্কার নেতৃত্বে আম্বেদকরের ছবি নিয়ে প্রতিবাদে যোগ দিয়েছে ডিএমকে, জেএমএম, সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টির মতো ‘ইন্ডিয়া’র শরিকরা। স্লোগান ওঠে, ‘জয় ভীম। অমিত শাহ মাফি মাঙ্গো।’ মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ একে অপরের পাপ সমর্থন করেন। নাহলে অমিত শাহকে ভৎর্সনা করার বদলে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সমর্থন করেন?’


    দিল্লি এবং বিহার ভোট আসন্ন। তার আগে অনগ্রসর ভোটব্যাঙ্কের কাছে আম্বেদকর-বিরোধী ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হলে কী পরিণতি হবে? সেটা ভেবেই আতঙ্কিত বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই বিকেলে সাফাই দিতে নামেন অমিত শাহ নিজেই। তাঁর দাবি, ‘আমার ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। আমরা আম্বেদকরকে অপমান করতেই পারি না। এটা কংগ্রেসের নোংরা রাজনীতি।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)