এই সময়: পাঁচ বছর পর অবশেষে স্বস্তি। সুড়ঙ্গের খোলা দুই প্রান্তের মধ্যের শেষ ছ’মিটার ব্যবধান নির্বিঘ্নে মিটিয়ে ফেললেন আইটিডি–আইটিডি সেমের যৌথ প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়াররা। কাজ শেষ হতেই সুড়ঙ্গের মধ্যে উৎসবের আবহ। পরস্পরকে অভিনন্দন এবং পিঠ চাপড়ানোর পালা যেন শেষ হতে চাইছিল না।
২০১৯–এর ৩১ অগস্ট ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গের উপরে মাটি ধসে গিয়ে বিপর্যয় দেখা দেয় বউবাজার দুর্গা পিতুরি লেন, স্যাকরাপাড়া লেন এবং গৌর দে লেনে। তার পরের কয়েক বছরে আরও কয়েকবার ভূগর্ভস্থ জল ঢুকে আসার ঘটনা ঘটেছে ওই এলাকায়। তবে সব দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত ‘ভালো খবরটা’ এসে পড়ল মাটির গভীর থেকে। ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গ পুরোপুরি তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে জানালেন কলকাতা মেট্রোরেল কর্পোরেশন লিমিটেডের (কেএমআরসিএল) আধিকারিকরা।
শিয়ালদহ স্টেশন থেকে এসপ্ল্যানেড — ২.৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিম, দু’দিকে যাওয়ার সুড়ঙ্গ তৈরি করা না যায়, তবে ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রো কোনও দিনই হাওড়া ময়দান থেকে সল্টলেক সেক্টর–ফাইভ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চলতে পারত না। এই অংশে পূর্বমুখী, অর্থাৎ এসপ্ল্যানেড থেকে শিয়ালদহের দিকে যাওয়ার সুড়ঙ্গটি তৈরি হয়ে গিয়েছিল পাঁচ বছর আগেই। কিন্তু বিপত্তি বেধেছিল পশ্চিমমুখী অর্থাৎ শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেডের দিকে যাওয়ার সুড়ঙ্গ তৈরির সময়ে।
মাটি ধসে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর ঢুকে পড়েছিল সুড়ঙ্গে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সুড়ঙ্গে দ্রুত জমে যাওয়া কংক্রিট ঢেলে দেওয়া হয়েছিল। পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গ তৈরিতে ব্যবহার করা টানেল বোরিং মেশিনটি (টিবিএম) সেই প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। পরের পাঁচ বছর ধরে কখনও সুড়ঙ্গকে কংক্রিট–মুক্ত করার কাজ চলে, কখনও আবার জমে যাওয়া টিবিএম–কে বাইরে বের করে আনা হয় কয়েক মাস ধরে।
এরই মাঝে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চলেছিল অসমাপ্ত সুড়ঙ্গটি সম্পূর্ণ করার কাজও। অতি ধীর গতিতে এবং সম্ভাব্য সব রকম সতর্কতা অবলম্বন করার পুরস্কার মিলল অবশেষে। শেষ ২০ ফুটের ব্যবধান ঘুচিয়ে সুড়ঙ্গের মধ্যে ট্র্যাক–বেড পাতার কাজটি শেষ করা গিয়েছে।
এর আগেই অবশ্য যাত্রী–নিরাপত্তার জন্য আবশ্যিক কাজগুলি অর্থাৎ জরুরি পরিস্থিতিতে যাত্রীদের একটি সুড়ঙ্গ থেকে অন্য সুড়ঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পথ এবং সুড়ঙ্গ থেকে যাত্রীদের সরাসরি বাইরে বের করে আনার ইভ্যাকুয়েশন শাফট তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গ তৈরির কাজটি সম্পূর্ণ হওয়ার পর এ বার আর এসপ্ল্যানেড ও শিয়ালদহের মধ্যে দুই সুড়ঙ্গেই রেললাইন পাতায় বাধা রইল না।
এর মধ্যে পূর্বমুখী সুড়ঙ্গে আগেই রেললাইন পাতার কাজটি সম্পূর্ণ হয়েছিল। এ বার অন্য সুড়ঙ্গেও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরুর আশা করা হচ্ছে। ট্র্যাক পাতার কাজ শেষ হলে হাওড়া ময়দান থেকে মাত্র আধ ঘণ্টার ট্রেন জার্নিতে পৌঁছে যাওয়া যাবে ১৬ কিলোমিটার দূরের সল্টলেক সেক্টর–ফাইভে।