রাজস্ব আদায় বাড়িয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পুরসভাগুলিকে কী ভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা যায়, তার ‘রোডম্যাপ’ তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হলো রাজ্যের ষষ্ঠ অর্থ কমিশনকে। সেই মতো পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলির খোলনলচে বদলের উদ্যোগ নেবে রাজ্য। যে সব সোর্স থেকে রাজ্য সরকার তার রাজস্ব সংগ্রহ করে, সেই টাকা যথাযথ ভাবে ব্যয় হচ্ছে কি না, সেটাকেও নতুন করে মূল্যায়ন করবে অর্থ কমিশন।
প্রশাসনিক ব্যয় সঙ্কোচ এবং রাজ্যের ঘাড় থেকে ঋণের বোঝা কী ভাবে কমানো যায়, সে বিষয়েও রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে তারা। এই লক্ষ্যে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে মাথায় রেখে তৈরি হলো রাজ্যের ষষ্ঠ অর্থ কমিশন। যেখানে চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বিবেদী ছাড়াও মেম্বার হিসেবে থাকছেন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস বর্ণালী বিশ্বাস, অবসরপ্রাপ্ত ডব্লুবিসিএস অফিসার আশিস চক্রবর্তী, ব্যাঙ্ক আধিকারিক রুমা মুখোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন আইএএস অজয় ভট্টাচার্য (মেম্বার সেক্রেটারি)।
সরকারি নির্দেশনামা জানানো হয়েছে, নতুন অর্থ কমিশনের পাঁচ বছরের মেয়াদকাল শুরু হবে ২০২৫–এর ১ এপ্রিল থেকে। দায়িত্ব নিয়ে ছ’মাসের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেবে সরকারের কাছে। কমিশনের বিচার্য বিষয়ও নির্দেশনামায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, পঞ্চায়েতের আর্থিক অবস্থা সরেজমিনে দেখার পাশাপাশি গ্রামের মানুষের কাছ থেকে কত ট্যাক্স আদায় হবে, রাজ্য সরকার এবং পঞ্চায়েতের মধ্যে রাজস্বের বণ্টন কী ভাবে হবে, পঞ্চায়েতগুলো কোন কোন দ্রব্য থেকে কতটা পরিমাণ টোল ও লেভি আদায় করবে, এই সমস্ত বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করবে কমিশন। রাজ্যের বিভিন্ন মিউনিসিপ্যালিটির আর্থিক অবস্থাও যাচাই করবে তারা। অর্থের জন্য পুরসভাগুলিকে যাতে সবসময় রাজ্য সরকারের মুখাপেক্ষী হতে না–হয়, তার উপায়ও বাতলে দেওয়া হবে।
গ্রামের রাস্তা ও নিকাশি নালা তৈরি, খাল কাটানো, পুকুর সংস্কার, কালভার্ট নির্মাণ–সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে রাজ্য কনসলিডেটেড ফান্ড থেকে পঞ্চায়েত এবং পুরসভাগুলিকে ফি–বছর মোটা টাকা আর্থিক অনুদান দেয়। এ ব্যাপারেও কমিশন রাজ্যকে পথ দেখাবে। পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলো কতটা পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে পারবে, তারও মাপকাঠি ঠিক করে দেবে তারা।
নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, ‘সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী, পাঁচ বছর অন্তর রাজ্য অর্থ কমিশন গঠন করা বাধ্যতামূলক। কমিশনের সুপারিশ মেনে পঞ্চায়েত এবং পুরসভাগুলিকে অর্থ বণ্টন করতে বলা হয়েছে। যদিও বাস্তবে অনেক রাজ্যই সেই নিয়ম মেনে চলে না। কেন্দ্রের পঞ্চদশ অর্থ কমিশন তাদের রিপোর্টে জানিয়েছিল, যে সব রাজ্য অর্থ কমিশন গঠন করবে না, তারা ভবিষ্যতে আর কেন্দ্রীয় অনুদান পাবে না। সেই মতো এ নিয়ে ছ’টি অর্থ কমিশন গঠিত হল পশ্চিমবঙ্গে।’