রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি
অ্যাকাউন্ট থেকে ডিডাক্ট হয়ে গেলেও এটিএম মেশিন থেকে বেরোয়নি একটি টাকাও। ডাল মে কুছ কালা হ্যায়, তা দ্রুত বুঝে গিয়েছিলেন শিলিগুড়ির ব্যবসায়ী কল্যাণ সাহা। দ্রুত মগজাস্ত্র প্রয়োগ করেন তিনি। আর উপস্থিত বুদ্ধির জেরে নিজের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকজনকে প্রতারিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচালেন শিলিগুড়ির ওই ব্যবসায়ী।
মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। অভিযোগ, এটিএমের যে জায়গা দিয়ে টাকা বাইরে আসার কথা সেখানে আঠা দিয়ে সানমাইকার টুকরো আটকে রেখেছিল প্রতারকরা। তাই মেশিন টাকা রিলিজ করলেও তা বাইরে আসছিল না।
এভাবে বেশ কয়েকজনের টাকা আটকে যায়। তাঁর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটার পরে বিষয়টি বুঝতে পারেন কল্যাণ। উপরের তলায় থাকা ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা রক্ষীকে ডেকে তড়িঘড়ি এটিএম কাউন্টারের শাটার নামিয়ে দেন তিনি। এরপর তালা ঝুলিয়ে প্রতারকদের হাত থেকে নিজেকে এবং বাকিদের বাঁচান শিলিগুড়ির ভারত নগরের বাসিন্দা।
তাঁর বক্তব্য, ‘এটিএম মেশিন বারবার নোট গুনে রিলিজ করে দিচ্ছিল। কিন্তু টাকা বাইরে আসছিল না। এটা থেকেই সন্দেহ হয়। হাত দিয়ে দেখি টাকা বের হওয়ার জায়গায় কিছু একটা আটকে দেওয়া হয়েছে। এরপরেই নিরাপত্তা রক্ষীকে ডেকে শাটার নামিয়ে দিয়ে ম্যানেজারকে বিষয়টি জানাই।’
ব্যবসায়ী কল্যাণ জমজমাট হিলকার্ট রোডে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে মঙ্গলবার রাতে ঢুকে ৩০০০ টাকা তোলার জন্য সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়ার এসএমএস এলেও মেশিন থেকে টাকা বের হয়নি। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও লাভ হয়নি। একই রকম ভাবে তাঁর পরে আরও দু’জন টাকা তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর কল্যাণ দেখতে পান মেশিনে কিছু একটা করা হয়েছে। ভিতরে আটকে থাকা সানমাইকা বের করার চেষ্টা না করে তিনি ব্যাঙ্কে গিয়ে সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীকে বিষয়টি জানান।
যে বিল্ডিং–এর নীচে ওই টাকা তোলার কাউন্টার রয়েছে, তার উপরেই ব্যাঙ্কের কার্যালয়। এটিএমে ঢুকে নিরাপত্তারক্ষীও বুঝতে পারেন মেশিনে কোনও সমস্যা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। এরপর শাটার নামিয়ে দেওয়া হয়। বুধবার সকালে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার, এটিএম সার্ভিসের কর্মী এবং যাঁদের টাকা বের হয়নি তাঁদের সকলের সামনে শাটার খুলে এটিএম পরীক্ষা করা হয়।
দেখা যায়, সব টাকা আটকে রয়েছে। মেশিনের একাধিক জায়গায় আঠা দিয়ে সানমাইকা সেট করে দেওয়া হয়েছে। যাঁদের টাকা আটকে গিয়েছিল সেই গ্রাহকদের প্রত্যেকের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নেওয়ার পরে ব্যাঙ্ক সেই টাকা ফিরিয়ে দেয়। গোটা ঘটনা জানিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে পুলিশে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, সম্ভবত ব্যাঙ্ক প্রতারণা চক্রের পক্ষ থেকে এই কাজ করা হয়েছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য,‘কয়েক বছর আগে কলকাতাতেও একই পদ্ধতিতে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক থেকে এভাবে টাকা তুলে নিয়েছিল রোমানিয়ান গ্যাং। কল্যাণ যদি উদ্যোগ না নিতেন তাহলে প্রতারকরা পরে ঢুকে সানমাইকা সরিয়ে সব টাকা বের করে নিয়ে চম্পট দিত।’