সোহম কর, কলকাতা: এক হাত দূর দিয়ে গঙ্গা বয়ে চলেছে। নদীর পাড়ে বসে গোছা গোছা হোগলা পাতা বাঁধছেন কয়েকজন। তাঁরা ময়ূরকণ্ঠী নৌকার মতো দেখতে হোগলা পাতার ডিঙি তৈরি করে ফেলবেন দেখতে দেখতে। তারপর সেটি গঙ্গায় ভাসবে। তার পাশে জল কেটে দৌড়বে রণতরী। তার পাশে তালপাতার ডোঙা সহ আরও অনেক নৌকা। এরকমই এক জলযান প্রদর্শনীর ব্যবস্থা হচ্ছে কলকাতার একধারে, গঙ্গাবক্ষে।
হোগলা ডিঙির পাশে গাদাগাদা প্লাস্টিকের জলের বোতল দিয়ে তৈরি হচ্ছে আর একখানা নৌকা। সবমিলিয়ে ৩৪টি নানা ধরনের নৌকা গঙ্গার জলে ছুটবে শুক্র ও শনিবার। নৌকা প্রদর্শনীর নাম, ‘আনন্দ’। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ‘সি এক্সপ্লোরার্স ইনস্টিটিউট’। হোগলা-প্লাস্টিক-তালপাতার সঙ্গে সেনাবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ, সারভেইলেন্স বোট ছুটবে গঙ্গার জল চিরে।
বুধবার দেখা গিয়েছে প্রস্তুতি তুঙ্গে। নৌকা প্রস্তুতকারকদের দম ফেলার সময় নেই। শেষ মুহূর্তের খুঁটিনাটি পরখ করার কাজ চলছে। ১০ বান্ডিল হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি হয়েছে ডিঙি। আবার একটু দূরে প্রায় বারোশো প্লাস্টিকের বোতল নিয়ে আরও একটি নৌকা প্রস্তুত হয়েছে। সি এক্সপ্লোরার্স ইনস্টিটিউটের কর্তা সমীর ঘোষ বলেন, ‘আমাদের এখানে আটটি আঞ্চলিক নৌকা থাকছে। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের ১০টি ও নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স, ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাব, এনসিসি সহ একাধিক সংস্থার ৩৪টি নৌকা থাকবে। এসব নিয়ে হবে প্রদর্শনী।’ কিছু বিলুপ্ত আঞ্চলিক নৌকাও প্রদর্শনীতে নিয়ে আসা হচ্ছে। রয়েছে তালের ডোঙা, জেলে ডিঙি, টিনের নৌকা প্রভৃতি। প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র প্রশিক্ষক তাপস চৌধুরী বলেন, ‘আমরা অনেক খুঁজে তালের ডোঙা হাওড়ার আমতা থেকে পেয়েছি। বন্যাপ্রবণ এলাকার মানুষ এই ধরনের নৌকার উপর এখনও ভরসা করেন। সাধারণত বড় আকারের ‘খুন্তি’ নৌকার দাঁড় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেক বাড়িতে সাধারণত সাইকেলের বিকল্প হিসেবে এর ব্যবহারের চল আছে।’ এছাড়াও রয়েছে টিনের নৌকা। যেগুলি সাধারণত মুর্শিদাবাদ, নদীয়ায় ব্যবহার হয়। তাপসবাবু জানান, হারিয়ে যাওয়া নৌকাগুলি কলকাতায় নিয়ে এসে মানুষের সামনে তুলে ধরাই সংস্থার উদ্দেশ্য। এর সঙ্গে তিনটি স্পোর্টস-বিনোদনমূলক নৌকাও থাকবে। ৭২ ফুট লম্বা একটি জলযান লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে মহিলারা চালাবেন। প্রিন্সেপ ঘাটের পথেই রয়েছে সি এক্সপ্লোরার্স ইনস্টিটিউট।
গঙ্গার পাড়ের এই প্রতিষ্ঠান ৪০ বছরে পা দিয়েছে। বুধবার তারা আয়োজন করেছিল নদীর সামনে বসে ছবি আঁকার অনুষ্ঠান। কয়েকজন শিল্পী গঙ্গার পাড়ে বসে সাদা ক্যানভাসে রং-তুলিতে ছবি আঁকেন। -নিজস্ব চিত্র