রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি
শিলিগুড়িতে ফ্ল্যাট কিনবেন ভাবছেন? তার আগে অবশ্যই নির্মাণ সংস্থা বা বিল্ডারের ঠিকুজি–কুষ্ঠি জেনে নেবেন। না হলে ঠকতে হতে পারে। টাকা ফেরত পেতে ভুগতে হতে পারে বিস্তর। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে শিলিগুড়ি শহরের নির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই চুক্তি অনুযায়ী ফ্ল্যাট না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কোথাও আবার রয়েছে সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও ফ্ল্যাট হস্তান্তর না করার নালিশ।
উত্তরবঙ্গের অলিখিত রাজধানীর তাজ রয়েছে শিলিগুড়ির মাথায়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘার মুকুট পরে ঘুম ভাঙে এই শহরের। দার্জিলিং–সহ উত্তর–পূর্ব ভারতের গেটওয়ে শিলিগুড়িতে আবাসনের চাহিদা গত কয়েক বছরে অনেকটাই বেড়েছে। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও অন্য রাজ্যের বাসিন্দারাও এখানে ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী। এই বিপুল চাহিদার জোগান দিতে তৈরি হচ্ছে একের পর এক আবাসন। কোথাও স্ট্যান্ড অ্যালোন ফ্ল্যাট।
এ সবের বুকিং থেকে অগ্রিম আর্থিক লেনদনের পর্ব মধুর হলেও, শেষমেশ ফ্ল্যাট হস্তান্তরের ক্ষেত্রে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সূত্রের খবর, এরকম একগুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়েছে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি মাসে শিলিগুড়ির ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে অন্তত ৩০০টি মামলা দায়ের হয়। সূত্রের খবর, এর মধ্যে প্রতি ৫০টি মামলার ২৮টি বিল্ডিং সংক্রান্ত।
ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যে অভিযোগ জমা পড়ে, তা মূলত প্রতারণার। চুক্তির সময়ে যে জায়গায় ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা থাকে, হস্তান্তরের সময়ে সে কথা রাখা হয় না। এমন অনেক প্রোমোটার রয়েছেন, যাঁরা দুই কিংবা তিন বছরের মধ্যে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করার চুক্তি করলেও ১০–১২ বছর পরেও ক্রেতাকে ঘোরাতে থাকেন। প্রতিটি মামলাই হয় বিল্ডারের বিরুদ্ধে। ফ্ল্যাট তৈরি করে দেওয়া হয় না, নয়তো প্ল্যানের বাইরে গিয়ে নির্মাণ করা হয়।
যে কারণে পুরনিগম থেকে কমপ্লিসন সার্টিফিকেট (সিসি) মেলে না। এর জেরে ফ্ল্যাটগুলির মিউটেশনও হয় না। কিছু ক্ষেত্রে আবার নিম্নমানের কাজেরও অভিযোগ জানান ক্রেতারা। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের শিলিগুড়ি শাখার বিচারক অপূর্ব ঘোষের বক্তব্য, ‘বিল্ডারদের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ আসছে। সবই প্রতারণা সংক্রান্ত।’
এমনই প্রতারণার শিকার হয়েছেন ঘোগোমালির বাসিন্দা শুভম সামন্ত। শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার এক বিল্ডারের কাছ থেকে তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট বুক করেছিলেন তিনি। অভিযোগ, দু’বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার চুক্তি থাকলেও চার বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও ফ্ল্যাট হস্তান্তর হয়নি। পুরো বিষয়টি জানিয়ে ক্রেতা সুরক্ষাতে মামলাও করেছেন তিনি। শুভম বলেন, ‘চুক্তির সময়ে ৭০ শতাংশ টাকা নিয়ে নিয়েছেন বিল্ডার। নির্ধারিত সময় পার করার পরে আরও দু’বছর কেটে গিয়েছে। এখনও আজ–নয়–কাল করে ঘোরাচ্ছেন। জানি না করে ফ্ল্যাট পাব। তাই মামলা করেছি।’
এরই সঙ্গে রয়েছে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ। কোথাও ছাদজুড়ে বিনা অনুমতিতে নয়া নির্মাণ করা হচ্ছে, কোথাও গ্যারাজের জন্য রাখা এলাকায় দোকান বানিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন প্রোমোটাররা। শিলিগুড়ির হাকিমপাড়া, হায়দারপাড়া, ফিডার রোড–সহ একাধিক এলাকায় এই ধরনের অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। এ সব অভিযোগ সম্পর্কে কনফেডারেশন অব রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (ক্রেডাই)-এর শিলিগুড়ি শাখার সভাপতি দীপক আগরওয়ালের বক্তব্য, ‘আমাদের কাছে আগে এই বিষয়ে কয়েকটি অভিযোগ এসেছিল।’ এই ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে শিলিগুড়ি পুরনিগম কী পদক্ষেপ করবে? মেয়র গৌতম দেবের বক্তব্য, ‘এর মধ্যে কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি৷ তবে অভিযোগ এলে আমরা ক্রেডাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। বিল্ডারদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও করা হয়।’