এই সময়, শিলিগুড়ি: ঠিক ছিল কৃষকদের প্রদর্শনী নিয়ে করা হবে কার্নিভাল। কিন্তু মানুষের উৎসাহ আর উদ্দীপনায় কার্নিভাল বদলে গেল মেলায়। বুধবার এই ঘটনার সাক্ষী হলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রশাসক এবং কার্নিভাল দেখতে আসা মানুষজন। প্রায় এক দশক ধরে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ফ্লোরিকালচার অ্যান্ড এগ্রি ম্যানেজমেন্ট (কোফাম) উত্তরবঙ্গজুড়ে কৃষকদের ফুল ও ফল চাষ নিয়ে নানা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
প্রশিক্ষণ নেওয়া মানুষদের আর্জি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত একদিনের জন্য তাঁদের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হোক। বুধবার সেই কার্নিভালের ব্যবস্থা করা হয়। সঙ্গে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ধানের উপরে একটি প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা ছিল। সামান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সংস্থান রাখা হয়েছিল।
কিন্তু কার্নিভালে শিলিগুড়ির সানডে হাট থেকে বিক্রেতারা জৈব চাষের উৎপাদন নিয়ে হাজির হলেন। ঘি থেকে মধু, সবজি সবই ছিল। ছাত্রছাত্রীরা হাজির হলেন তাঁদের রকমারি উপাচার নিয়ে। কেউ বসে পড়লেন ছবি আঁকতে। কেউ কাঁথা স্টিচের ডিজাইন নিয়ে। কেউ আনলেন বেত ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে তৈরি হাতের কাজ। তার সঙ্গে একদল ছাত্রছাত্রী নিয়ে এলেন রকমারি খাবার।
কোচবিহারের বাসিন্দা রিসার্চ স্কলার টুম্পা খাতুন নিয়ে এলেন পাকিস্তানের বিরিয়ানি থেকে নানা জনপ্রিয় খাবার। টুম্পা বলেন, ‘মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে আমার গবেষণা। কাজ শেষের দিকে। হঠাৎই খবর পেলাম কার্নিভাল হচ্ছে। আমি রান্না করতে ভালোবাসি। কে না চায় নিজের রান্না করা খাবার অন্যদের খাইয়ে মতামত নিতে।’ মোমো, চাউমিন নিয়ে বসেছিলেন পাহাড়ের মেয়ে অঞ্জলী। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে এমন মেলা প্রায়ই হয়। বাড়ি থেকে সবাই খাবার নিয়ে আসে। সকলে মিলে খুব আনন্দ হয়। তাই আমিও এখানে চলে এলাম।’
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক নুপুর দাস কার্নিভালের এমন বদলে যাওয়া চেহারা দেখে অবাক। তিনি বলেন, ‘কোফাম থেকে কার্নিভাল করতে চেয়েছিল। উপাচার্য নেই বলে বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে বরাদ্দ দিতে পারেনি। এখান থেকে–ওখান থেকে সাহায্য নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। তাই বলে এমন কাণ্ড হবে সেটা ভাবিনি।’
উত্তরবঙ্গে স্ট্রবেরি চাষ চালু হয় কোফামের হাত ধরেই। ড্রাগন ফ্রুটসও শিলিগুড়িতে প্রচুর পরিমাণে চাষ হচ্ছে। আম থেকে জারবেরা ফুল, অর্কিড, মাশরুম–সহ নানা চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে কোফামের হাত ধরেই। কোফামের আধিকারিক অমরেন্দ্র পান্ডে বলেন, ‘কৃষকদের ফুল, ফল, মাশরুম নিয়ে আমরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিই। তাঁদের আবদারেই কার্নিভালের ব্যবস্থা করা হয়। এখন অনেকেই বলছেন, প্রতি বছর এমন মেলা হোক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী ইউনিয়নের নেতা সুমন চট্টেপাধ্যায় চান, প্রতি বছর এমন মেলা হোক। জিটিএ’র অন্যতম পরামর্শদাতা এস পি শর্মাও মেলায় হাজির হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের মেলা পাহাড়ে হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এমন ব্যবস্থা অভিনব।’