পার্থ চৌধুরী: ইঁট-কাঠ পাথরে ঘেরা শহরে বাগানে ফলছে তাজা সবজি, তাও আবার সার ও কীটনাশক ছাড়াই! কীভাবে? নিজের বাড়ির ছাদের 'স্মার্ট সবজি বাগান' বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বর্ধমানের সনত্ সিংহ। কী কী ফলিয়েছেন তিনি? শুনলে তাজ্জব বনে যাবেন।
বর্ধমান (Burdwan) শহরের ঝাপানতলা থাকেন সনত্। সিংহমশাই বাগান-বিলাসী। চাকরি করেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিদ্যালয়ের অধীনে বর্ধমান কৃষি খামারে কৃষি কলেজে। সেখানকার অফিস সুপারিন্টেন্ডেন্ট তিনি। কিন্তু মনে পড়ে থাকে বাগানে। বছরভর সবজি আর ফুলের চাষ করেন সনত্। কোথায়? নিজের বাড়ির ছাদেই। এবার স্মার্ট বাগান(Smart Garden) তৈরিতে মন দিয়েছেন।
নিজের বাড়ির ছাদে নয়, বর্ধমান শহরেরই সোনার কালীবাড়ির পাশের গলিতে একচিলতে জমিতে সনতের এই স্মার্ট বাগান। কিন্তু বাগান করলেই হবে না, গাছে নিয়মিত জলও দিতে হবে। কিন্তু বাগানের মালিক তো দিনভর কাজে ব্যস্ত। তাহলে উপায়? যেখানেই থাকুন না কেন, ওয়াইফাইয়ের মাধ্য়মে নিজের বাড়ির ছাদ বাগানে জল দেন সনত্। সেই প্রযুক্তিকেই নামিয়ে এনেছেন মাটিতেও!
এখন শীতের মরশুম। ছাদবাগানে ফুলকপি, বেগুন বিন্স ,গাজর ,লঙ্কা, ধনেপাতা, মটরশুটি, সিম, লাউ কুমড়ো ফলিয়েছেন সনত্। রয়েছে পেপে,কলা, আদা, পেয়ারা গাছও। বাদ যায়নি বর্ষাকালীন পিঁয়াজ চাষও! গরমকালে আবার লাউ,কুমড়ো-সহ মরশুমি সবজির চাষও করেন। এবার নতুন বাগানেও থরে থরে সব্জি। গত সপ্তাহ পর্যন্ত ফলেছে ১২০ বস্তা আদা, কম করে ২৫০ পিস ফুলকপি।
কোনও রাসায়নিক ছাড়াই এত সবজি! কিছু তো লাগে, এত সব্জি ফলাতে? সনত্ জানিয়েছেন, মাটিতে মুরগির মল দেওয়া হয়। গাছের খাবার বলতে সর্ষের খোল জল। আর গোবর সার। আর? পিঁয়াজের খোসা আর ফেলে দেওয়া চা পাতা জোগাড় করেন সনত্। চা পাতাগুলোকে ভালো করে জলে ধুয়ে ওখান থেকে চিনি আর দুধের অংশ বার করে দেন। তারপর শুকিয়ে কিছুটা গাছের সাথে দেন আর কিছুটা পিয়াজের খোসার সাথে মিশিয়ে জলে ভিজতে দিয়ে দেন। এরপর সময়মতো সেই জল গাছের গোড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন গাছেও স্প্রে করা হয়। আর পোকা, বা কীটপতঙ্গ থেকে বাঁচতে হাতিয়ার জৈব প্রযুক্তি।
কীরকম? বালতির জলে এক পাতা শ্যাম্পু, দুকৌটো গোল ,দাঁত মাজার। তাতে তামাক থাকে, প্রচুর ঝাঁজ। সঙ্গে পিঁয়াজের খোসা আর চা পাতার জল স্প্রে করা হয়। কিন্তু উদ্ভাবনী ক্ষমতায় জোরে ফসল তো ফলল, তা দিয়ে কী করেন? সনত্ জানালেন, নিজের বাড়িতে খান। বাকিটা পড়শি,বন্ধুবাধবদের উপহার দেন। সবাই খুশি হয়।