মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজ্যসভায় সংবিধানের ৭৫ বছর নিয়ে বিতর্কের শেষে জবাবি বক্তৃতায় শাহ বলেছিলেন, ‘‘এখন একটা ফ্যাশন হয়েছে, অম্বেডকর, অম্বেডকর, অম্বেডকর, অম্বেডকর... এত বার ভগবানের নাম নিলে সাত জন্ম পর্যন্ত স্বর্গলাভ হত।’’ নিশানায় ছিলেন রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেস। সেই মন্তব্য নিয়ে বুধবার থেকে দিল্লির রাজনীতিতে তুলকালাম। এ নিয়ে তৃণমূল দলগত ভাবে সরব হয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে। রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন অমিত শাহের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগে নোটিস জমা দিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘অম্বেডকর’ মন্তব্য নিয়ে তৃণমূলের ‘উচ্চকিত’ প্রতিবাদে খুশি বাবাসাহেবের পরিবার। মমতার দলকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন অম্বেডকরের পৌত্র তথা প্রাক্তন সাংসদ প্রকাশ অম্বেডকর।
শাহের মন্তব্য নিয়ে বৃহস্পতিবারও উত্তাল হয়েছে সংসদ চত্বর। কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতাও বিষয়টি ফের সরব হলেন। বৃহস্পতিবার থেকে অ্যালেন পার্কে বড়দিনের কার্নিভাল শুরু হয়েছে। তার উদ্বোধনেই গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি সম্প্রদায়েরই আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। সকলকেই প্রয়োজন। বাবাসাহেব অম্বেডকরকে নিয়ে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তা শুনে আমি স্তম্ভিত!’’
অনেকের মতে, শাহের ‘অম্বেডকর’ মন্তব্যকে হাতিয়ার করে ভবিষ্যতে মতুয়া ভোটের জন্য ঝাঁপানোর পথ প্রশস্ত করে রাখছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা। যে মতুয়া ভোটের বড় অংশই বিজেপির ঝুলিতে। শাহের মন্তব্যে শুধু ‘দলিতদের অপমান’ই দেখছে না তৃণমূল, ‘পশ্চিমবঙ্গেরও অপমান’ হয়েছে বলেও তারা তুলে ধরতে চাইছে। কারণ, অম্বেডকর বাংলা থেকেই প্রথম নির্বাচিত হয়ে সংসদে গিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, বুধবারই শাহের মন্তব্য নিয়ে মমতা বলেছিলেন, “মুখোশ খুলে গিয়েছে। অমিত শাহ গণতন্ত্রের মন্দিরে অম্বেডকরকে অপমান করেছেন। এটা বিজেপির জাতিবিদ্বেষী ও দলিত-বিরোধী মনোভাবের পরিচয়।” মমতা বলেন, “আসনসংখ্যা ২৪০-এ নেমে যাওয়ার পরেও যদি ওঁরা এমন আচরণ করেন, তা হলে কল্পনা করুন, ৪০০ আসন জিতলে বিজেপি কতটা ক্ষতি করত!”
যদিও গোটা বিতর্কে শাহের দাবি, তাঁর বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে। আগেও আমার বিবৃতি কৃত্রিম মেধার মাধ্যমে বিকৃত করা হয়েছিল।’’ বিজেপির আরও বক্তব্য, বিরোধীরা শাহের বক্তৃতার ছোট্ট একটি অংশ তুলে ধরছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যসভায় অম্বেডকরকে নিয়ে যা বলেছিলেন, তার পরেও একটি বাক্য রয়েছে। শাহ বলেছিলেন, এত বার অম্বেডকরের নাম করায় তিনি খুশি। অমিত শাহ সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, “সবাই আমার পুরো বক্তব্য শুনুন। তা হলেই সব বুঝতে পারবেন।”
বড়দিনের উৎসব উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকেও আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, আগে বড়দিন জাতীয় ছুটি হিসাবে গণ্য হত। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার তা বাতিল করেছেন। মমতার কথায়, ‘‘আমরা কিন্তু বাতিল করিনি। আমরা ছুটি দিয়েছি। কারণ, ওই দিন সকলেই চায় পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে। পরিবারের লোকেদের সঙ্গে বেরোতে। আমরা সব সম্প্রদায়ের উৎসব পছন্দ করি।’’