• শীতের কুয়াশা, সীমান্তের ফাঁক গলেই দালাল চক্রের মাধ্যমে চলছে অনুপ্রবেশ
    বর্তমান | ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: শীতের মরশুমকে চুটিয়ে কাজে লাগাচ্ছে আন্তর্জাতিক মানব পাচারচক্রে যুক্ত দালালরা। একের পর এক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে তদন্তকারীদের হাতে। শীতের মরশুম আর সীমান্তের ফাঁকফোকরকে ঢাল করে ওপার থেকে লোক ঢোকাচ্ছে দালালরা। এরইমাঝে ফের রানাঘাট জেলা পুলিসের জালে ধরা পড়েছে দুই নাবালক সহ মোট ছয় বাংলাদেশি। এছাড়া দুজন দালালেরও নাগাল পেয়েছেন তদন্তকারীরা। 


    সম্প্রতি হাঁসখালি থানার কাছে গোপন সূত্রে খবর আসে, রামনগর ১ পঞ্চায়েতের বড় চুপড়িয়া এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা বিশ্বাসের বাড়িতে আত্মগোপন করে রয়েছে বেশ কিছু বাংলাদেশি। সেইমতো অভিযান চালিয়ে ওই মহিলার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রুজিনা খাতুন, আনোয়ারা বেগম, লাবিয়া খাতুন এবং রাসেল হোসেনকে। এছাড়াও দুজন নাবালককে উদ্ধার করা হয়। জানা গিয়েছে, তারা প্রায় এক মাস আগেই মানব পাচারচক্রের দালাল আনোয়ারা বিশ্বাস এবং তার সাগরেদ বলাই রায়ের হাতযশে সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে ঢুকেছিল। পরে তারা মুম্বইতে শ্রমিকের কাজে লাগে। একমাস কাজ করে তারা হাঁসখালিতে ফিরে আসতেই ধরা পড়ে পুলিসের জালে। তদন্তকারীদের দাবি, তাদের নামে তৈরি জাল ভারতীয় পরিচয়পত্র নিতেই ওই বাংলাদেশিরা ফিরে এসেছিল। কিন্তু এত অনুপ্রবেশ হচ্ছে কোথা দিয়ে?


    প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। দেখা যাচ্ছে, শীতের মরশুমকে পুরোদস্তুর কাজে লাগাচ্ছে দালালরা। কুয়াশা মোড়া রাতে দৃশ্যমানতা কম থাকার সুযোগ নিয়ে কাঁটাতারবিহীন সীমান্তগুলি দিয়ে ঢোকানো হচ্ছে বাংলাদেশিদের। কারণ হাঁসখালিতেই অন্তত কুড়ি শতাংশ এলাকায় ইছামতি নদীর ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কাঁটাতার নেই। যেহেতু এখন ইছামতিতে প্রায় জল নেই, তাই রাতের বেলা সেই নদী অনায়াসেই পার করা যাচ্ছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজর এড়াতে পারলেই কেল্লাফতে। দালাল চক্রের সঙ্গে মোটা আর্থিক লেনদেনেই তৈরি হয়ে যাচ্ছে ভারতীয় পরিচয়পত্র। তারপর অনুপ্রবেশকারীরা দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে পাড়ি দিচ্ছে শ্রমিক হিসেবে। একইপথে এবারের ধৃতরাও ঢুকেছিল। রানাঘাট জেলা পুলিসের অতিরিক্ত সুপার লালটু হালদার বলেন, আনোয়ারা বিশ্বাস তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশিদের। আনোয়ারা মানব পাচারের অন্যতম দালাল। বাংলাদেশের বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতির কারণে কাজের পরিসর কমে যাওয়ায় পেটের দায়ে অনুপ্রবেশকারীরা এই দেশে ঢুকছে। আমরা রাতের বেলায়ও নজরদারি চালাচ্ছি সীমান্ত সংলগ্ন রাস্তাগুলিতে। 


    প্রসঙ্গত, গত মাস খানেকের মধ্যেই ৩২ জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়েছে রানাঘাট জেলা পুলিসের এলাকা থেকে। তাদের জেরা করে ১৯ জন দালালের নাগাল পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এই দালালচক্র মূলত হাঁসখালি, ধানতলা, গাংনাপুরের মতো সীমান্ত ঘেঁষা থানা এলাকাগুলিতে কাজ করে।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)