• ছাগলের ঘরে ৪১ লক্ষ গাঁজা বেচেই শিল্পপতি চাচি
    বর্তমান | ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সুখেন্দু পাল, মেমারি: মেমারি শহরের অন্য‌তম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা চকদিঘি মোড় কৃষ্টিপাড়া। এখানেই এলাকার এক প্রভাবশালী নেতার বাড়ি। থানার দূরত্বও খুব বেশি নয়। সবসময় ভিড় লেগে থাকে। মূল রাস্তা থেকে মিনিট তিনেক হেঁটে গেলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে ‘চাচি’র বাড়ি। তার বাড়ির ছাগলের ঘর থেকেই ৪১লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। ছোট বাঙ্কার তৈরি করে নোটগুলি সাজানো ছিল। উপরে ঘাস রাখা ছিল। নীচে যে ‘গুপ্তধন’ লুকানো ছিল তা দেখে বোঝার উপায় ছিল না। কৃষ্টিপাড়ায় চাচির দোতলা বড় বাড়ি। নীচের তলায় কাউন্টার রয়েছে। সেখানে জানালা দিয়ে চাচি ও তার মেয়ে গাঁজার পুরিয়া বিক্রি করে। ছোট পুরিয়ার দাম ৫০ টাকা। বড়র দাম ১০০ টাকা। সকাল ৭টায় কাউন্টার খুলে যেত। রাত ১২টা পর্যন্ত কাউন্টার খোলা থাকত। দুপুরে গাঁজা নেওয়ার জন্য কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন পড়ে যেত। ভিড় সামাল দিতে মাঝেমাঝে চাচির ‘বাহিনী’ ময়দানে নামত। যেন সে লিখিত লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছিল। 


    স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পুলিস, প্রভাবশালী সবাই চাচির কাউন্টারের কথা জানত। কিন্তু সে সময়মতো ‘প্রসাদ’ পৌঁছে দেওয়ায় তার কারবার বন্ধ হয়নি। মাঝে কয়েকবার অবশ্য চাচিকে মেমারি থানা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মাস ঘুরতে না ঘুরতে আবার এসে সে জমিয়ে ব্যবসা করত। ব্যবসা সামাল দেওয়ার জন্য মেয়েকেও সে তালিম দিয়েছিল। মা না থাকলে মেয়ে গাঁজা বিক্রি করত। বুধবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে পুলিস চাচির মেয়ে সঙ্গীতা সাহানিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বাড়ি থেকে ৪৭কেজি গাঁজা এবং বিপুল টাকা উদ্ধার করেছে। 


    বৃহস্পতিবার চাচির বাড়িতে পৌঁছে দেখা গেল, চারপাশে গ্রাহকদের ভিড়। একে একে তারা কাউন্টারের সামনে এসে ঘুরে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, পুলিস এর আগেও সঙ্গীতার মা’কে গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু তাদের কারবার কোনওদিনই বন্ধ হয়নি। প্রায় ২০ বছর ধরে তাদের কারবার চলছে। গত কয়েক বছরে ফুলেফেঁপে উঠেছিল। দাপট থাকায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস দেখাত না। এই কারবার করে তারা বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠেছে। শহরে তাদের চার-পাঁচটি বাড়ি রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় জমি কেনা রয়েছে। এছাড়া চারচাকা গাড়ি রয়েছে। সঙ্গীতার বিয়ে হয়েছে মশাগ্রামে। তবে সে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে বাপেরবাড়িতে থাকে। তারা ওড়িশা থেকে গাঁজা এনে বিক্রি করত। একসঙ্গে বিভিন্ন গাড়িতে চাপিয়ে তারা ২০-৩০ কেজি গাঁজা আনত। অনেক সময় ট্রেনেও তারা গাঁজা এনেছে। ঘরে পুরিয়া তৈরি করার জন্য আলাদা লোক ছিল। দু’ধরনের পুরিয়া তৈরি করে বিক্রি হতো। বহু বছর ধরে তারা শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় গাঁজার কারবার চালিয়ে এলেও এতদিন তা কেন পুলিসের নজরে আসেনি তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। অতিরিক্ত পুলিস সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে জেরা চলছে।
  • Link to this news (বর্তমান)