সংবাদদাতা, রামপুরহাট: এয়া কোয়ালিটি ইনডেক্সে কি এবার দিল্লিকে ছুঁতে চলেছে তারাপীঠ? কয়েকমাস ধরে এই তীর্থভূমিতে যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তাতে এই প্রশ্নই তুলছেন অনেকে। ঘন জনবসতি এলাকায় রাস্তার ধারে নানা আবর্জনা জড়ো করে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে এলাকার বাসিন্দা ও পর্যটকদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
ঘটনাস্থল তারাপীঠের আটলা মোড়ের কাছে। সেখানে রামপুরহাট-তারাপীঠ রাস্তার ধারে প্লাস্টিক, ফাইবার, হোটেলের নষ্ট হয়ে যাওয়া বিছানা, এঁটো পাতা, মৃত বিড়াল, কুকুর সহ বিভিন্ন বর্জ্য জড়ো করে পোড়ানো হচ্ছে। ধোঁয়ায় চারপাশ ঢেকে যাচ্ছে। কয়েকহাত দূরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি প্রচুর লজ, হোটেল ও বহুতল আবাসন রয়েছে। আবর্জনা পোড়ানো হলে ধোঁয়ার কারণে সেগুলির জানালাও খোলা যায় না। ধোঁয়ায় অনেকেই অসুস্থ বোধ করছেন।
প্রশাসনের এক কর্তা জানান, প্রকাশ্যে আবর্জনা পোড়ানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু যেখানে আবর্জনায় আগুন লাগানো হয়, তার কয়েকহাত দূরেই টিআরডিএ’র অফিস। তারাই আবর্জনা ফেলে রেখেছে বলেও অভিযোগ। টিআরডিএ’র চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কালীডাঙা গ্রামের কাছে পরিত্যক্ত খাদানেই ডাম্পিং গ্রাউন্ড করা হবে। প্রশাসনেরও তাতে সায় রয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
তারাপীঠের এক বাসিন্দা বলেন, দু’একদিন অন্তর ভোরের দিকে কারা যেন আবর্জনা পুড়িয়ে দিচ্ছে। পুরো এলাকা ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে। শিশু ও বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অনেকে ধোঁয়া সহ্য করতে না পেরে কাশতে কাশতে বমি করে ফেলছেন।
১৪ ডিসেম্বর থেকে পরিবার নিয়ে তারাপীঠের একটি হোটেলে রয়েছেন স্বর্ণলতা দাস। তিনি বলেন, গত রবিবার এখানে বায়ুদূষণ বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছিল। আইকিউএয়ার অনুসারে সেদিন এই এলাকার বায়ুদূষণ দিল্লির কাছাকাছি ছিল বলে তিনি দাবি করেন। স্থানীয়রা বলছেন, সপ্তাহে দু’তিনদিন তাঁদের এমনই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।
কিন্তু কেন এই বায়ুদূষণ? টিআরডিএ সূত্রে খবর, তারাপীঠে ডাম্পিং গ্রাউন্ড নেই। তাই কয়েকশো লজ, হোটেলের আবর্জনা সংগ্রহ করে রাস্তার ধারে জড়ো করা হচ্ছে। রাতে কিংবা ভোরের দিকে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় বায়ুদূষণ বেড়ে যাচ্ছে।
এর আগে তারাপীঠের কড়কড়িয়া গ্রামের শেষ প্রান্তে টিআরডিএ ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু তাতে স্থানীয়রা আপত্তি তোলেন। পরে রামপুরহাটের কালীডাঙা গ্রামের পরিত্যক্ত পাথর খাদানকে চিহ্নিত করা হয়। রামপুরহাট কলেজের ভূগোলের এইচওডি জয়ন্ত দাস বলেন, বায়ূদুষণের মাত্রা ৫০ পর্যন্ত স্বাভাবিক। একশো পর্যন্তও খুব চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু তারাপীঠে মাঝেমধ্যেই তা ৩০০’র কাছাকাছি পৌঁছে যায়। যা বিপজ্জনক। এতে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের সমস্যা বেড়ে যাবে। এমনিতেই বীরভূম পাথর শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এখানে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি।