নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: নদীয়া জেলাজুড়ে ধান কেনার প্রক্রিয়া জোরকদমে শুরু হয়েছে। কিন্তু ধান কেনার গতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে। কারণ বেশ কিছু রাইস মিলে ‘প্যাডি হোল্ডিং লিমিট’ পেরিয়ে গিয়েছে। অথচ জেলার ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছনো যায়নি। এই পরিস্থিতিতে বাকি রাইস মিলের উপর বাড়তি চাপ পড়ছে। তারা কতটা ধান নিতে পারবে-সেটাই বড় প্রশ্ন। হোল্ডিং লিমিট কিছুটা বাড়ানো হলে সুবিধা হতো বলে বিভিন্ন রাইস মিলের মালিকরা জানান।
এরই মধ্যে নদীয়া জেলায় পরিদর্শনে এসেছেন স্পেশাল সেক্রেটারি অরিন্দম দত্ত। আজ শুক্রবার পর্যন্ত তিনি জেলার বিভিন্ন ধান ক্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখবেন। জেলাজুড়ে ধান কেনাবেচা কীরকম চলছে, ফড়ে বা মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা চাষিদের লভ্যাংশে ভাগ বসাচ্ছে কিনা-সেদিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছে। কারণ ফড়েদের দাপট রুখতে রাজ্য সরকার নির্দেশ দিয়েছে। প্রশাসনের আধিকারিকরাও লাগাতার অভিযান চালাচ্ছেন। সেইসঙ্গে রাইস মিলের এই সমস্যা মেটাতে স্পেশাল সেক্রেটারি জেলা খাদ্যদপ্তরকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন কিনা-সেটাও দেখার বিষয়। জেলা খাদ্যদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, বেশ কিছু রাইস মিল তাদের প্যাডি হোল্ডিং লিমিট ছুঁয়ে ফেলেছে। তবে তারা আমাদের কাছে চাল সরবরাহ করলেই তাদের ক্যাপাসিটি বেড়ে যাবে।
জেলায় এমনিতেই রাইস মিলের সংখ্যা কম। এবছর জেলার ১৩টি রাইস মিল ধান কেনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। ধান কেনা শুরুর আগে সমস্ত রাইস মিলের ‘প্যাডি হোল্ডিং লিমিট’ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ মিলগুলি ওই নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান থেকে চাল উৎপাদন করে মজুত করতে পারে। এবছর বাছাই করা কিছু রাইস মিলকে ধান কেনার প্রক্রিয়ায় যুক্ত করে রাজ্য সরকার। রাইস মিলের হোল্ডিং ক্যাপাসিটি বেশি থাকা, গত কয়েকবছরে ভালো পারফরম্যান্স, রাইস মিল গত বছর চাল সরবরাহ করতে গড়িমসি করেছিল কিনা-এসব খতিয়ে দেখা হয়। এসমস্ত মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারলে তবেই সিকিউরিটি মানি জমা করে রাইস মিলগুলি সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে।
নদীয়া জেলায় খাদ্যদপ্তরের তিন লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এক মাসে ৭০-৮০হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। কিন্তু জেলার শান্তিপুর, রানাঘাট-১, কালীগঞ্জ ও চাকদহ ব্লকের চারটি রাইস মিল তাদের প্যাডি হোল্ডিং লিমিট ছুঁয়ে ফেলেছে। প্রতিটি মিলই নির্ধারিত আট-দশহাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করে ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে বাকি নয়টি রাইস মিলের মাধ্যমেই খাদ্যদপ্তরকে ধান থেকে চাল উৎপাদন করতে হবে। এতে ধান কেনার গতি শ্লথ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেলা রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুমন ঘোষ বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। অ্যাসোসিয়েশনের তরফে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করব। ধান কেনায় যাতে কোনও বাধা না পড়ে-সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ফাইল চিত্র