অভিষেক পাল, বহরমপুর: ২ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগে সূতির বহুতালি পঞ্চায়েতের সেক্রেটারি গ্রেপ্তারির পর পুলিস তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। যেহেতু এই আর্থিক লেনদেনের নথি পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্টে ও ব্যাঙ্কে রয়েছে, তাই সেই নথি ঘেঁটে অন্যদের যোগসাজশ খুঁজছে পুলিস। ইতিমধ্যেই এই আর্থিক দুর্নীতিতে সেক্রেটারি অশোককুমার ঘোষ ছাড়াও প্রাক্তন এক পঞ্চায়েত প্রধানের সইয়ের হদিশ পেয়েছে পুলিস। দু’জনেরই সইয়ের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য হ্যান্ড রাইটিং এক্সপার্টের কাছে নমুনা পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ওই প্রধান টাকা তোলার সময় সেক্রেটারির সঙ্গে যৌথভাবে সই করেছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিস। কিন্তু, তদন্ত চলাকালীন তিনি পুলিসের কাছে দাবি করেন, ওই সই তাঁর নিজের করা নয়। এই দাবির পর পুলিস দু’জনের বর্তমান সই ও আগের সই হ্যান্ড রাইটিং এক্সপার্টের কাছে পাঠিয়েছে। সেই রিপোর্ট এলেই বোঝা যাবে যে সেক্রেটারি ওই পঞ্চায়েত প্রধানের সই নকল করেছিলেন কি না। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বিপুল টাকা গরমিল হওয়ার যে অভিযোগ, তাতে কয়েকজন তৃণমূল নেতা এবং পঞ্চায়েতের সেক্রেটারির যোগসাজশ পেয়েছে পুলিস। তাই সঠিক পদ্ধতিতে তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে মামলা এগিয়ে রাখছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
এক পুলিস আধিকারিক বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই তদন্ত। তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ের কাজ খুব সাবধানে করতে হচ্ছে। হ্যান্ড রাইটিং এক্সপার্টের কাছে আমরা কয়েকটি সই পাঠিয়ে, সেগুলি একই ব্যক্তির করা কি না, তা যাচাই করছি। এই রিপোর্ট সঠিক এলে এই তদন্তের মোড় ঘুরে যেতে পারে। জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের কাছে ওই সেক্রেটারির নামে একটি আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ে। সেই অভিযোগ প্রশাসনের তরফে সূতি-১ ব্লকের বিডিওকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়। বিডিও তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ফান্ডের টাকায় ব্যাপক গরমিল খুঁজে পান। তারপর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস গত শনিবার অশোককে গ্রেপ্তার করে। জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে তুলে তাঁকে ছ’দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিস। আজ, শুক্রবারই তাঁর হেফাজতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। পুলিসি জেরায় ওই সেক্রেটারি বেশকিছু তথ্য সামনে এনেছে। তদন্তকারী আধিকারিকরা সেই তথ্য খতিয়ে দেখছেন।
একটি পঞ্চায়েতের সেক্রেটারির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দায়ের হতেই জেলার আরও কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কিছু কিছু জায়গায় কাজ না হলেও খাতায়-কলমে দেখানো হয়েছে, সেই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাহলে সেই অর্থ কী এভাবে তছরুপ করা হয়েছে? উঠছে প্রশ্ন।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, কোথাও কোনও অভিযোগ পেলে তা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হয়। বহুতালি পঞ্চায়েতের এই ঘটনাও প্রশাসন সক্রিয় হয়েছে বলেই সামনে এসেছে। ওই সেক্রেটারিকে এই আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে আগেই সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তিনি এক বছরের বেশি সময় ধরে পঞ্চায়েত থেকে কোনও মাইনে পাচ্ছেন না। এখন পুলিস তদন্ত শুরু করেছে। এই ঘটনায় আরও যারা যুক্ত আছে, তারা সকলেই গ্রেপ্তার হবে বলে আমরা আশা করছি। প্রতীকী ছবি