স্কুলে শিক্ষিকার স্বামীর দাদাগিরি প্যারাটিচারের নাকে ঘুসি, চাঞ্চল্য
বর্তমান | ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, কান্দি: অনিয়মিত স্কুলে আসেন শিক্ষিকা। এমনই অভিযোগ তুলে স্কুল পরিদর্শকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন সহ শিক্ষকরা। তার জেরে বৃহস্পতিবার স্কুলে এসে দাদাগিরি দেখালেন শিক্ষিকার স্বামী। তিনি নিজেও আবার শিক্ষক। এদিন স্ত্রীর স্কুলে এসে তিনি এক পার্শ্বশিক্ষককে মারধর করেন। তাঁর নাক, মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। এদিন দুপুরে বড়ঞার মহিষগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। পরে পুলিস পৌঁছে শিক্ষিকার স্বামীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আক্রান্ত পার্শ্বশিক্ষককে বড়ঞা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মহিষগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ১৬২ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তিনজন শিক্ষক এবং দু’জন পার্শ্বশিক্ষক রয়েছেন। যদিও এক শিক্ষিকা অনিয়মিত স্কুলে আসেন বলে অভিযোগ। এমনকী স্কুল কামাইয়ের জন্য তিনি ক্যাজুয়াল লিভও দিতে রাজি হন না। আবার স্কুলে এলেও তাঁর কোনও সময় ঠিক থাকে না বলে অভিযোগ। সম্প্রতি বড়ঞা স্কুল পরিদর্শককে ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকরা। আর তাতেই সামনে এল শিক্ষিকার স্বামীর দাদাগিরি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই শিক্ষিকার স্বামী স্থানীয় তেলডুমা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তাঁর বাড়ি কোচবিহার হলেও তিনি স্থানীয় আন্দি গ্রামে থাকেন। তিনি এদিন দুপুরে স্কুলে এসে প্রচণ্ড চিৎকার করে অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে বচসা জুড়ে দেন। এমন সময় স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক বিশ্বরূপ মৈত্র প্রতিবাদ করলে তাঁর নাকে ও মুখে ঘুসি মারা হয়। মারধরের ফলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁর নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।
মহিষগ্রামের বাসিন্দা সমর ঘোষ বলেন, চিৎকার শুনে স্কুলে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় একটি চেয়ারে ওই পার্শ্বশিক্ষককে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। গ্রামবাসীরা অভিযুক্ত শিক্ষিকার স্বামীকে আটকে রেখে থানায় খবর দেন।
স্কুল চত্বরের ওই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। খবর পেয়ে পুলিস আসে। ওই শিক্ষিকার স্বামীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পার্শ্বশিক্ষককেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আক্রান্ত পার্শ্বশিক্ষক বলেন, ওই শিক্ষিকার স্বামী দাদাগিরি দেখাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে ধীরে কথা বলতে বলি। এটাই আমার অপরাধ। হাতের কাছে পেয়ে বেধড়ক মারধর করে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মল্লিকা ঘোষ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষিকা নিয়মিত স্কুলে আসেন না। আবার এলেও সময়মতো আসেন না। কখনও দেরিতে আসেন। আবার কখনও স্কুল ছুটির আগেই বাড়ি চলে যান। এতে স্কুলে পড়াশোনার চরম ক্ষতি হচ্ছিল। অভিভাবকরা এর কৈফিয়ত চাইছিলেন। সেই কারণে আমরা বিষয়টি স্কুল পরিদর্শককে জানিয়েছিলাম। এদিন আমি অফিসিয়াল কাজে বাইরে ছিলাম। সেই সময় ওই শিক্ষিকার স্বামী স্কুলে এসে দাদাগিরি দেখান। স্কুলের এক পার্শ্বশিক্ষককে মারধর করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিস দেখছে।
ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত শিক্ষিকা ও তাঁর স্বামীর মোবাইল বন্ধ রয়েছে। ফলে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বড়ঞার স্কুল পরিদর্শক মহম্মদ জীবাণুর রহমান বলেন, এনিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে ঘটনার কথা শুনেছি। খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। বড়ঞার বিডিও গোবিন্দ দাস বলেন, পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।