বড়ভিটা সুরেন্দ্রনাথ বর্মন আদর্শ বিদ্যাপীঠে ছাত্র ভর্তির লক্ষ্যে রেজিস্টার হাতে দুয়ারে শিক্ষক
বর্তমান | ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
রাজীব বর্মন, দেওয়ানহাট: বিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তির রেজিস্টার হাতে বাড়ির দরজায় হাজির খোদ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অভিভাবকদের ডেকে তাঁদের বোঝাচ্ছেন সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানোর কথা। সেসঙ্গে ভরসা জুগিয়ে আরও বলছেন, আমাদের স্কুলেই এখন ভালো পড়াশোনা হয়। বাড়ির পাশের স্কুল ছেড়ে দূরের স্কুলে কেন পাঠাবেন! বৃহস্পতিবার দুপুরে এমন চিত্রই দেখা গেল দিনহাটা-১ ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম মাতালহাটের বড়ভিটায়। রেজিস্টার হাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্কুলে ছাত্র ভর্তি করাচ্ছেন বড়ভিটা সুরেন্দ্রনাথ বর্মন আদর্শ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার পর নতুন শিক্ষাবর্ষে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া জোগাড় করতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছেন ওই সরকারি জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘রেজিস্টার হাতে দুয়ারে শিক্ষক’।
গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই ‘পড়ুয়া’ সংগ্রহ অভিযান চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রাথমিকের পাঠ শেষ করেই গ্রামীণ এলাকায় অনেক শিশু মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজে যাওয়া বাবা-মার কাছে চলে যায়। পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যায়। তাই এবার নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই স্কুলে ভর্তির রেজিস্টার হাতে গ্রামবাসীদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে নতুন শিক্ষাবর্ষে এলাকার কমপক্ষে ৬০ জন পড়ুয়াকে পঞ্চম শ্রেণিতে স্কুলে ভর্তি করার টার্গেট নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার ভর্তির রেজিস্টার হাতে শিক্ষকরা বাড়িতে যাওয়ায় স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয় দু’জন। ওই দুই ছাত্রের বাবা-মা দিল্লিতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। বাড়িতে তারা ঠাকুমার সঙ্গে থাকে। ঠাকুমা মরিয়ম বিবি বলেন, দুই ছেলে ও তাঁর স্ত্রী দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করে। আমার সঙ্গেই থাকে নাতিরা। বাড়িতে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এসে নাতিদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে নিয়েছে। নিয়মিত স্কুলে যেতে বলেছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কর্মসূচিতে স্কুলের অতিথি শিক্ষক সুব্রতকুমার দাস সহ বাকি শিক্ষক শিক্ষিকাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন কোচবিহার জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য তথা স্কুল পরিচালন কমিটির সদস্য কৃষ্ণকান্ত বর্মন। কৃষ্ণকান্তবাবু বলেন, শিক্ষকদের কাছে কর্মসূচির কথা শুনে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিই। ২০১৪ সালে স্থাপিত হয় স্কুলটি। একজন অতিথি শিক্ষক রয়েছেন। কোনও স্থায়ী শিক্ষক নেই। এলাকার ১০ জন শিক্ষানুরাগী ছেলেমেয়ে শুরু থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে নিয়মিত স্কুলে পড়াচ্ছে। দ্রুত এই স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক দেওয়া দরকার। অতিথি শিক্ষক সুব্রতকুমার দাস বলেন, আমাদের স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আছে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও প্রায় পাঁচশো। মঙ্গলবার থেকে বাড়ি বাড়ি রেজিস্টার নিয়ে গিয়ে ছাত্রদের স্কুলে ভর্তি করানোর কর্মসূচি করছি। ইতিমধ্যে অনেকে পড়ুয়াকে স্কুলে ভর্তি করাতে পেরেছি। নিজস্ব চিত্র