ঠান্ডা কি চলেই গেল? ঘাম মুছতে মুছতে প্রশ্ন বাঙালির
বর্তমান | ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এই ক’দিন আগেও কেঁপে কূল পাচ্ছিল না কলকাতা। কারণে-অকারণে রাস্তায় বেরিয়ে আনন্দ শুরু করে দিয়েছিল মানুষ। আচমকা হাওয়া গরম। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হু হু করে বেড়ে ঘাম বের করে দিচ্ছে। জ্যাকেট-সোয়েটার খুলে ‘কি গরম, কি গরম’ বলে আফসোস শুরু হয়েছে শহরে।
এ সময় কোথায় উত্তুরে হাওয়া দেবে, সেই হাওয়ায় গা এলিয়ে বসা যাবে, তা না! এই শেষ ডিসেম্বরেও রোদে চাঁদি ফাটছে, হাতে একখানা ছাতা থাকলে ভালো। কিছুদিন আগে কলকাতার ন্যূনতম তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল সাড়ে বারো ডিগ্রিতে। বৃহস্পতিবার আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানাল, গত ২৪ ঘণ্টায় শহরের ন্যূনতম তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। সর্বোচ্চ ২৬.৩। প্রসঙ্গত ভরা এপ্রিলে ভোরবেলার দিকে ২৭-২৮ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা থাকে সাধারণত।
বছর শেষ হতে হাতে আর দিন দশেক মাত্র। পার্ক স্ট্রিট আলোতে রঙিন। উৎসব আসছে বলে মানুষ বাড়ি বসে থাকতে মোটেও রাজি নয়। শহর ও আশাপাশের জেলা থেকে ভিক্টোরিয়া, চিড়িয়াখানা, ময়দান, জাদুঘরে আসা শুরু হয়ে গিয়েছে। সর্বত্র ভিড়। কিন্তু গরমের কারণে ঘুরতে প্রবল অস্বস্তি। বৃহস্পতিবার বারাসত থেকে সপরিবারে কলকাতায় এসেছিলেন সুবিমল বিশ্বাস। বললেন, ‘দিন কয়েক আগেও বেশ ঠান্ডা। ভালোই ঘুরছিলাম। আজ তো ভিক্টোরিয়া থেকে ময়দান পর্যন্ত হেঁঠে আসতেই গলদঘর্ম হয়ে গেলাম। মাথায় টুপি রাখতে চাইছে না বাচ্চারা।’ কপালে ঘামের বিন্দু ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আইসক্রিমের দিকে চোখ খুদেদের। নিউ মার্কেটের এক আইসক্রিম বিক্রেতা বললেন, ‘গরম পড়লে আমাদের ব্যবসা বাড়ে। কাল থেকে বেশ গরম পড়েছে। ফলে বিক্রিও বেড়েছে। মাঝখানে কয়েকদিন বিক্রি একেবারে কমে গিয়েছিল।’ এখন সকাল-দুপুরে রোদের তাপ প্রচণ্ড। জ্যাকেট-সোয়েটার গা ছেড়ে হাতে উঠেছে। ক্যামাক স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে ছিলেন অণ্বেষা আইচ। বললেন, ‘গরম জামা নিয়ে আসি কারণ রাতে বাড়ি ফিরি। দিনের বেলা ব্যাগেই ভরে রাখছি। শীতকালে এরকম ওয়েদার ভালো লাগে না।’ সবমিলিয়ে শীত নিয়ে গেল গেল রব। তার মাঝে অবশ্য আবহাওয়া অফিস একটু হলেও আশার খবর দিয়েছে। আজ-কালের মধ্যে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তাই অনেকে এখন আকাশের দিকে তাকাচ্ছেন আর চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলছেন, ‘আকাশ দেখে মনে তো হচ্ছে বৃষ্টি হবে।’
এরই মধ্যে হাওয়া অফিসের বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে দিল, কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃহস্পতিবার ছিল ২৬.৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। সল্টলেকে আরও গরম। সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬.৯, দমদমে ১৪.২। উলুবেড়িয়ায় ১৪, ক্যানিং ১৫, ডায়মন্ডহারবারে ১৫.৭ ও মগরার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ছিল। বারাকপুরের তাপমাত্রা একই রয়েছে। ১৩ ডিগ্রিতে স্থির তা।
কিন্তু সামনে যে বড়দিন। তারপর নববর্ষ। সামনে টানা উৎসব। শীত না পড়লে তো সব মাটি হয়ে যাবে। ফলে উত্তুরে হাওয়ার উপর অভিমান করে মানুষ এখন বৃষ্টির প্রতীক্ষায়। সে যদি খানিক ঠান্ডা বয়ে আনে, তবেই রক্ষে।