হাল ফিরছে কলকাতার ‘কিডনি’র, উপগ্রহ চিত্রে মিলল প্রমাণ
বর্তমান | ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: ইস্ট কলকাতা ওয়েটল্যান্ডকে বলা হয় কলকাতার ‘কিডনি’। শহরের বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই পূর্ব কলকাতা জলাভূমির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্য সরকার এবং আইসিএআর-সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিফরি) এই জলাভূমি পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ নিয়েছে। সাফল্যও মিলেছে সরকারি উদ্যোগে। কেন্দ্রীয় নথিতেই মিলেছে তার প্রমাণ। ২০০০, ২০১২ এবং ২০২৪— এই জলাভূমির বিগত ২৪ বছরের উপগ্রহ চিত্রের (জিআইএস) তুলনামূলক তথ্য তুলে ধরেছে সিফরি। তাতে দেখা গিয়েছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৬৩২ হেক্টর জলাভূমি পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে গত ১২ বছরে অর্থাৎ, ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে প্রায় এক হাজার হেক্টর জলাভূমি। জলাভূমি প্রাণ ফিরে পাওয়ায় ফিরছে বাস্তুতন্ত্রও।
পূর্ব কলকাতা জলাভূমি রক্ষার জন্য বহুদিন ধরে একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে রাজ্য সরকারের পরিবেশ দপ্তরের অনুদানে পুনরুজ্জীবনের একটি বিশেষ প্রকল্পের কাজ চলছে। সহযোগিতায় রয়েছে সিফরি, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও মৎস্য দপ্তর। ওই প্রকল্পকে সামনে রেখে গত ৬ ডিসেম্বর সল্টলেকের নলবনে একটি কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে সিফরি, রাজ্যের পরিবেশ দপ্তর, মৎস্য দপ্তর, কৃষি বিভাগ, উদ্যানপালন দপ্তর এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সেখানেই পূর্ব কলকাতা জলাভূমি নিয়ে জিআইএস পদ্ধতিতে তৈরি করা ভৌগোলিক নকশা প্রদর্শন করে সিফরি। তাঁদের বিজ্ঞানীরাই এটি বানিয়েছেন। বিগত বছরগুলিতে জলাভূমি কতটা ছিল, ধীরে ধীরে কতটা জলাভূমি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে, দেখানো হয় ওই কর্মশালায়। সেখানে বলা হয়েছে, ২০০০ সালে পূর্ব কলকাতা জলাভূমির মোট আয়তন ছিল ৪৪৪২ হেক্টর। ২০১২ সালে আরও ৭৭০ হেক্টর এলাকার জলাভূমি পুনরুজ্জীবিত হয়। জলাভূমির মোট আয়তন দাঁড়ায় ৫২১২ হেক্টর। ২০২৪ সালে শেষতম সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আরও ৮৬২ হেক্টর পুনরুজ্জীবিত হয়ে জলাভূমির মোট আয়তন দাঁড়িয়েছে ৬০৭৪ হেক্টর। অর্থাৎ, গত ১২ বছরে প্রায় এক হাজার হেক্টর জলাভূমি পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হয়েছে।
জানা গিয়েছে, বিস্তীর্ণ এই জলাভূমির উপর প্রায় ২ লক্ষ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে বিভিন্নভাবে। তাই পুনরুজ্জীবন প্রকল্পে জলাভূমির বিভিন্ন অংশের জল, মাটি, শ্যাওলা ইত্যাদির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সব উপাদানের গুণগত মান পরীক্ষা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত (রামসর সাইট) এই জলাভূমিতে প্রায় ২৫৪টি ভেড়ি রয়েছে। সিফরির পক্ষ থেকে ২০৬টি ভেড়ির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, পুনরুজ্জীবন প্রকল্পটি চলবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত। এই সময়কালের মধ্যে আরও জলাভূমি পুনরুজ্জীবিত হয়ে বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশের হাল ফিরবে বলে আশাবাদী তারা।