প্রবীর কুণ্ডু, কোচবিহার (তুফানগঞ্জ)
রাজ আমলের রাস্তা। নাম হেরিটেজ রোড। তবে নামই সার। এই রাস্তায় একবার গেলে দু’বার কেউ যেতে চান না। ঠেলায় পড়ে যাঁরা যাতায়াত করেন, তাঁরাও প্রাণ হাতে নিয়ে চলাচল করেন। রাস্তার পিচ উধাও হয়ে কঙ্কাল সার চেহারা নিয়েছে। রাস্তা জুড়ে ছোট বড় নানা গর্ত। মরণফাঁদ বললেও ভুল হবে না। পথ দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোচবিহার থেকে তুফানগঞ্জের নাটবাড়ি যাওয়ার এই হেরিটেজ রাস্তার এমনই বেহাল দশা।
এক মাস দু’মাস ধরে নয়, বছর তিনেক ধরে এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতি এই হেরিটেজ রোডের। সবচেয়ে করুণ দশা কালজানি বাজার থেকে কুয়ারপার ব্রিজ পর্যন্ত। প্রায় দুশো মিটার এই বেহাল রাস্তায় বেলাগাম গাড়ি চালাতে গিয়ে গত রবিবার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে প্রাণ হারান এক শিক্ষক দম্পতি। রাস্তা লাগোয়া পুকুরে পড়ে গিয়েছিল গাড়িটি।
কুয়ারপাড় ব্রিজ থেকে নামতেই বেহাল রাস্তা থেকে ছিটকে পুকুরে পড়ে চারজনের মৃত্যু হয়। সোমবার সকালে ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে টোটো উল্টে যায় রাস্তার পাশের কৃষি জমিতে। প্রাণে বাঁচেন যাত্রীরা। দুপুরে সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময়ে ভাঙা রাস্তায় পড়ে গুরুতর জখম হন বৃদ্ধ। বুধবার কালজানি–নাটবাড়ি রুটের বেসরকারি বাস বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়।
বেহাল রাস্তার পাশে গালামাল বিক্রি করেন কণিকা দাস। তিনি বলেন, ‘রোজই আমাদের রাস্তায় দুর্ঘটনা হয়। লোকে মরলে জানাজানি হয়। আহত হলে কে আর খোঁজ রাখে?’ বৃহস্পতিবার বিকেলে ধুলো থেকে বাঁচতে গামছায় মুখ ঢেকে হেলেদুলে ভাঙা অটোরিক্সা নিয়ে যাচ্ছিলেন দিলীপ বর্মন। তিনি বলেন, ‘কালজানি থেকে নাটাবাড়ির রাস্তায় যাতায়াত করাটা বিভীষিকা। কিন্তু উপায়ও নেই। অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। গাড়ির যন্ত্রাংশ মাঝেমাঝেই বিকল হয়ে যায়। যাত্রীদের কাছে বেশি ভাড়া চাইলেও তাঁরা দিতে রাজি হন না।’
এই রাস্তার গায়ে যতই কলঙ্ক থাক, ধুলোর আড়ালে আছে রাজ আমলের ইতিহাস। কোচবিহারের মহারাজা এই রাস্তা দিয়ে হাতি–ঘোড়ায় চেপে তুফানগঞ্জের নাগুরহাটে যেতেন শিকার করতে। মাঝে নাটাবাড়ি এলাকায় বিশ্রাম করতেন। যেহেতু রাজ আমলের রাস্তা, তাই এর পোশাকি নাম হেরিটেজ রোড।
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে হেরিটেজ রোড সংস্কারের উদ্যোগ নেয় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর।সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে প্রায় ২৫ কোটি টাকা খরচ করে কোচবিহার ২ ব্লকের কালজানি থেকে তুফানগঞ্জের নাটবাড়ি হয়ে ধলপল পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করা হয়। প্রায় দু’বছর ধরে কাজ চলে। তবে বছর চারেক ধরে রাস্তার এখন জীর্ণ দশা।
হেরিটেজ রোড যখন সংস্কার করা হয়েছিল তখন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। এ দিন তিনি বলেন, ‘রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে অভিযোগ শুনেছি। সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে কোচবিহার থেকে তুফানগঞ্জের নাটবাড়ি ও ধলপল এলাকায় কয়েক’শো মানুষ যাতায়াত করেন। হেরিটেজ রোড সংস্কার করার খুব প্রয়োজন।’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘হেরিটেজ রোড নিয়ে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।’