দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস বলে পরিচিত রবীন্দ্র সরোবরের পাড়ে ভাঙন ঠেকাতে এবং জলদূষণ মোকাবিলায় বিশেষ পদক্ষেপ করল রাজ্য। পুর–দপ্তর সূত্রে খবর, গাছের গুঁড়ি দিয়ে সরোবরের চার পাশ বাঁধানোর জন্যে সম্প্রতি ১ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
খুব শিগগিরই পরিবেশবান্ধব উপায়ে জলাশয়ের পাড় বাঁধানোর কাজ শুরু হবে। ৬ মাসের মধ্যে কাজ শেষের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরোবর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ–কে। পুর–দপ্তরের এই পদক্ষেপকে স্বাগতই জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, অনেক জলজ প্রাণীর ঠিকানা রবীন্দ্র সরোবর। প্রশাসনের এই উদ্যোগে তারা সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারবে।
৭৩ একর জায়গা জুড়ে থাকা রবীন্দ্র সরোবর ২০০৩ সালে জাতীয় সরোবরের মর্যাদা পায়। সব মিলিয়ে সরোবর চত্বরে গাছ রয়েছে ৭৫ প্রজাতির। জলজ প্রাণী রয়েছে ১২টির বেশি প্রজাতির। দীর্ঘদিন ধরেই সরোবরের চার পাশ গাছের গুঁড়ি দিয়ে বাঁধানোর দাবি তুলে আসছিলেন পরিবেশকর্মীরা।
সেই দাবিকে গুরুত্ব দিয়েই গ্রিন সিটি মিশনে সরোবরের জন্যে অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুর–দপ্তর। পরিবেশবিজ্ঞানী তড়িৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘পাথর দিয়ে পাড় বাঁধালে সরোবরের জীববৈচিত্র নষ্ট হয়। সে দিক থেকে শালের মতো গাছের গুঁড়ি দিয়ে পাড় বাঁধালে যেমন জলজ প্রাণীও ভালো থাকে, তেমনই পাড়ও মজবুত হয়।’ জলজ প্রাণীদের ভালো রাখতে প্লাস্টিক–সহ নানা ধরনের বর্জ্য ফেলাও ঠেকাতে হবে বলে মনে করিয়েছেন তড়িৎ।
দীর্ঘদিন ধরে সরোবরের পরিবেশ–রক্ষায় লড়াই করে আসা সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘শুধু অর্থ বরাদ্দ করলেই হবে না। তা ঠিক ভাবে যাতে কাজে লাগানো হয়, সে দিকেও নজর রাখতে হবে।’ ১৫ বছর ধরে নদী, জলাশয়ের বাঁধ মেরামতির কাজ করে আসছেন মিলন মাইতি। তিনি বলেন, ‘বড় গাছের গুঁড়ি দিয়ে বাঁধ দিলে তা অনেক শক্তিশালী হয়।’ কেএমডিএ–র এক কর্তার বক্তব্য, ‘জলের চাপে পাড় ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেটা আটকানোর জন্যেই এই পদক্ষেপ। বট, আম, জাম, কাঁঠাল, শাল গাছের গুঁড়িই মূলত ব্যবহার করা হবে পাড় শক্ত করার জন্যে।’