এই সময়, শ্রীরামপুর: এত আনন্দ আয়োজন। আলোয় আলো গোটা শহর। কিন্তু থমকে যে আছে সময়টাই!
উৎসবের আয়োজনের কোনও খামতি এমনিতে ছিল না। বড়দিন উপলক্ষে আলোর মালা পরে সেজে উঠেছে গোটা শ্রীরামপুর শহর। আলোয় শ্রীরামপুর যেন ভাসছে। কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের ধাঁচে এমন সাজ এই প্রথম বার। বৃহস্পতিবার বিকেলে পার্ক স্ট্রিটেরই অ্যালেন পার্ক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে সূচনা করলেন শ্রীরামপুর হেরিটেজ ও পর্যটন উৎসবের।
পার্ক স্ট্রিট, দার্জিলিংয়ের সঙ্গে শ্রীরামপুরকে মিলিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তখন বিকেল সাড়ে ৪টে। কিন্তু এ কী! তখনই নজরে পড়ল শ্রীরামপুরে উৎসবের কেন্দ্রস্থল সেন্ট ওলাভ গির্জার ঘড়িতে ৪টে বেজে ১০ মিনিট। শুরু হলো গুঞ্জন, ফিসফাস।
প্রশ্ন উঠল, বহু ইতিহাসের সাক্ষী, ঐতিহ্যবাহী ওই গির্জার ঘড়ি কি স্লো হয়ে পড়েছে? আর একটু পর ঘড়ির দু’টো কাঁটার একটুও না–নড়া দেখে বোঝা গেল, ঘড়ি আসলে বন্ধ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেন্ট ওলাভ চার্চের ঘড়ি বন্ধ বেশ কিছু দিন যাবৎ। ওখানেই তাল কাটল শ্রীরামপুর পুরসভার পরিচালনায় ও রাজ্য পর্যটন দপ্তরের সহযোগিতায় আয়োজিত শ্রীরামপুর হেরিটেজ অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের।
গির্জার ঘড়ি বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রীরামপুর পুরসভার কাউন্সিলার ঝুম মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘যেখানে মুখ্যমন্ত্রী উৎসবের সূচনা করছেন ও শ্রীরামপুর পুরসভা এই শহরের গর্ব ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরছে, সেই সময়ে সেন্ট ওলাভ চার্চ কর্তৃপক্ষের আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল। ঘড়ি তো আজ হঠাৎ বন্ধ হয়নি। বেশ কিছু দিন ধরেই বন্ধ। তা হলে? মনে রাখতে হবে, এর সঙ্গে আমাদের শহর ও রাজ্যের মানসম্মান জড়িয়ে রয়েছে।’
থমকে থাকা ঘড়ি নিয়ে শ্রীরামপুরবাসীরও মন ভালো নেই। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, ‘গির্জার সঙ্গে ঘড়ির একটা নিবিড় সম্পর্ক। আবার সেন্ট ওলাভ গির্জাকে ঘিরেই শ্রীরামপুরে এ বার এত বড় উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।’ শ্রীরামপুরের মানুষের সাফ কথা, ঘড়ি সচল রাখার দায়িত্ব গির্জা কর্তৃপক্ষের উপরেই বর্তায়। সেন্ট ওলাভ গির্জার ফাদার অনুপ মণ্ডল বলছেন, ‘যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঘড়ি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’ যদিও শ্রীরামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ সন্তোষকুমার সিংহ বলেন, ‘গির্জার বিষয়ে আমাদের কিছু করণীয় নেই। তবে গির্জা কর্তৃপক্ষ আমাদের ঘড়ি বন্ধ থাকার কথা সময় মতো জানালে আমরা অন্তত কিছু চেষ্টা করতে পারতাম।’
এ দিন বিকেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শ্রীরামপুর সেন্ট ওলাভ গির্জার সঙ্গে হুগলি জেলারই চন্দননগর চার্চ ও ব্যান্ডেল চার্চকে যুক্ত করা হয়। শ্রীরামপুরে সেন্ট ওলাভ চার্চের অনুষ্ঠানে ছিলেন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী ও বেচারাম মান্না, হুগলির জেলাশাসক মু্ক্তা আর্য, চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অমিত জাভালগি, হুগলি গ্রামীণের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন, বিধায়ক সুদীপ্ত রায় ও অরিন্দম গুঁই, শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক শম্ভুদীপ সরকার, পুরসভার চেয়ারম্যান গিরিধারী শাহ, রিষড়া পুরসভার চেয়ারম্যান বিজয় সাগর মিশ্র, বৈদ্যবাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পিন্টু মাহাতো, চেয়ারম্যান পারিষদ সন্তোষকুমার সিংহ, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। প্রতি বছরই বড়দিন উপলক্ষে সেন্ট ওলাভ গির্জা সাজিয়ে তোলা হয়। কিন্তু এ বারই প্রথম কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের ধাঁচে শ্রীরামপুরে কার্নিভাল হচ্ছে।
সেন্ট ওলাভ চার্চের সামনে তো বটেই, উৎসব উপলক্ষে এনএস অ্যাভিনিউ এবং শ্রীরামপুর শহরের অন্য কিছু জায়গা সাজানো হয়েছে আলো দিয়ে। কাল, ২১ ডিসেম্বর মেলা পুরোদমে শুরু হবে, চলবে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন থাকবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা। শ্রীরামপুর পুরসভার পুরপ্রধান গিরিধারী শাহর বক্তব্য, ‘শ্রীরামপুরে স্থাপত্যের বহু নিদর্শন রয়েছে। এই উৎসবে বর্তমান প্রজন্মের কাছে আমরা সেই বিষয়গুলোকে তুলে ধরতে চাই।’ পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘শ্রীরামপুরের এই উৎসবে পরিবহণ দপ্তর থেকে একটি ভেসেল দেওয়া হচ্ছে। সেটি প্রতিদিন শ্রীরামপুর থেকে ব্যান্ডেল চার্চ পর্যন্ত যাতায়াত করবে।’