রনি চৌধুরী, ধূপগুড়ি
মন্দ নয় সে পাত্র ভালো। পাত্রীও বেশ মানানসই। রীতিমতো যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্মার্ট, ঝকঝকে। পকেটে টাকা রয়েছে, অবস্থাপন্ন। পাত্র–পাত্রী দুই পরিবারেরই পছন্দ। সব কথাবার্তাও পাকা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, সব ঠিকঠাক থাকলেও ছাদনাতলায় সাতপাকে বাঁধা পড়া হচ্ছে না।
এমনটাই ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ধূপগুড়ির ভাণ্ডারকুড়া গ্রামের বিয়ের যোগ্য তরুণ–তরুণীদের। একেবারে জঙ্গলের কোলে জেগে ওঠা একটা গ্রাম। গাছপালা একেবারে ঘিরে রেখেছে আলতা ২ নং পঞ্চায়েতের এই গ্রামকে। পাশেই জলপাইগুড়ি বন বিভাগের মরাঘাট রেঞ্জ। সেখান থেকে যখনতখন হাতি চলে আসে। সবুজ ভেদ করে বেরিয়ে আসে পাহাড়ের মতো প্রাণীর দল। কখনও ঘুরতে–ঘুরতে ঢুকে পড়ে গ্রামে, কখনও বা খাবারের খোঁজে। ঘরে হানা দেয় অহরহ। ফলে সব সময়ে ত্রস্ত হয়ে থাকেন গ্রামবাসীরা। রাত বাড়লে আতঙ্ক বাড়ে। ছায়াকেও যেন ভয় লাগে! এই বুঝি কালো পাহাড় হাজির হবে বাড়ির উঠোনে।
এ খবর আশপাশের গ্রামের সকলেরই জানা। তাই এই গ্রামে মেয়ের বিয়ে দিতে অনেকেই পিছপা হয়ে পড়ছেন। দূর থেকে সম্বন্ধ এলেও হাতির খবর গোপন রাখা যাচ্ছে না। তারপরও গ্রামের ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে গ্রামের মানুষদের। তাই অনেকে গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য ঠিকানায়। সেখান থেকে ছেলের বিয়ে দিচ্ছেন। অথবা রাজি করাচ্ছেন পাত্র পক্ষকে। তাতেও কথা দিতে হচ্ছে, ভাণ্ডারকুড়ি গ্রামে নতুন বৌকে যেতে হবে না!
এখানকার বাসিন্দা সঞ্জিত রায়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল আলতাগ্রাম এলাকার এক তরুণীর সঙ্গে। বিয়ে ঠিকঠাক হওয়ার কয়েকদিন পর পাত্রীর মামা এবং পিসেমশাই বেড়াতে আসেন ভাণ্ডারকুড়িতে। সব আর একবার দেখেশুনে নেবেন আর কী! তাঁরা ঘুরতেফিরতে ঘরের পিছনে চলে যান। দেখেন, হাতির পায়ের ছাপ। বাড়ি ফিরে এ কথা জানাতে বিয়ে ভেঙে যায়। এমন একাধিক ঘটনা রয়েছে এই গ্রামে। তাঁরা নিজেদের পরিচয় সামনে আনতে চাইলেন না।
সঞ্জিতের থেকেও মন–খারাপ করা ঘটনা ঘটেছে। গ্রামের মানুষরা গল্প করতে করতেই বললেন, এমন কত জনের বিয়ে ঠিক হলেও সানাই বাজেনি। এমনও হয়েছে, পাকা কথা সারা। বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। শুধু দিনক্ষণ ঠিক করতে হবে। পাত্রের গ্রামে এসেছে পাত্রীর পরিবার। বিয়ের আগে কুটুম্বদের আতিথ্যে এলাহি খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। আচমকা গ্রামে এসে পড়ে হাতি। একের পর এক বাড়ি, মাঠের ফসল লন্ডভন্ড করে দেয়। এর পর আর এই গ্রামে মেয়েকে বিয়ে দিতে ভরসা পায়নি পাত্রপক্ষ। কয়েকজন সাহসীও আছেন। তাঁরা মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন এই গ্রামে। বা পাত্র হবু শ্বশুরবাড়িতে ক’দিনই বা আসবেন, এই কথা ভেবে বিয়ের পিঁড়িতে বসে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন এ গ্রামের মেয়েকে।