ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়া থেকে বাঘিনি জ়িনাত ঢুকে পড়ল রাজ্যে। শুক্রবার সকালে বেলপাহাড়ি রেঞ্জের ওদলচুয়া সংলগ্ন মাছগেড়িয়া জঙ্গলে ঢুকেছে জ়িনাত। এই জঙ্গল থেকে ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর হয়ে বাঁকুড়ায় পৌঁছে যেতে পারে সে। লোকালয়ে প্রবেশ করাও যে অসম্ভব কিছু নয়—তাও মানছেন অনেকে। যদিও সেই সম্ভবনা এখনই দেখছে না বনদপ্তর। জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় বাঘ ধরার বিশেষজ্ঞ টিমকে পাঠানো হয়েছে। ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরের সব ডিভিশনের বন কর্তাদেরও সতর্ক করা হয়েছে। রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা ‘এই সময় অনলাইন’-কে বলেন, ‘এটা নিশ্চিত যে বাঘটি রাজ্যে ঢুকেছে। আমরা জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় মাইকে প্রচার শুরু করেছি। সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে। অহেতুক আতঙ্কের কারণ নেই, তবে সতর্ক থাকতে হবে।’
বাঘিনি জ়িনাতকে ধরতে নানা ‘টোপ’ দেওয়া হয়েছিল। নানা ভাবে চেষ্টা চালানো হলেও লাভ হয়নি। তিন বছর বয়সী বাঘিনি জ়িনাত সিমলিপালের জঙ্গল ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পার করে ১০ ডিসেম্বর হাজির হয় ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়ার জঙ্গল এলাকায়। আশঙ্কা ছিল, সে একদিন এ রাজ্যে ঢুকে পড়বে। অবশেষে সে আশঙ্কা সত্যি করে বাঘ রাজ্যে ঢুকেই পড়ল।
স্বাভাবিকভাবেই শাল-মহুলের জঙ্গলে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ৬ বছর আগে যে আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল, সেই স্মৃতি আর কোনও ভাবেই ফিরে পেতে চাইছিল না জেলাবাসী। এর আগে ২০১৮ সালে প্রায় তিন মাস বাঘের উৎপাতে তীব্র আতঙ্কে দিন কাটাতে হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের। সেই বাঘ কোথা থেকে এসেছিল, তা আজও রহস্য। এ বার যদিও বাঘ কোথা থেকে এবং কী ভাবে এসেছে, তা অনেকটাই পরিষ্কার।
মহারাষ্ট্রের আন্ধেরি-তাডোবার জঙ্গল থেকে জ়িনাত ও আরও একটি বাঘিনি যমুনাকে বংশবৃদ্ধির জন্য উড়িয়ে আনা হয়েছিল ওডিশার সিমলিপালে। কয়েক দিন কোয়ারান্টিনে (সফ্ট রিলিজ়) রাখার পরে গত ২৪ নভেম্বর সিমলিপাল টাইগার রিজ়ার্ভের মুক্ত জঙ্গলে ছাড়াও হয় জ়িনাতকে। কিন্তু দিন দশেকের বেশি সেখানে তার মন টেকেনি। চলে এসেছে এ দিকে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগের কথা মাথায় রেখে নজরদারিতে নেমেছেন ঝাড়গ্রামের বনাধিকারিকরা। আর ঝাড়গ্রাম এলাকায় বাঘ ঢুকেছে শুনেই আতঙ্কে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলার বাসিন্দাদের একটা অংশ। 'ফের বাঘ আসবে না তো বাঘ', ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। বনমন্ত্রী জানিয়েছেন, সুন্দরবন থেকে চার-পাঁচ জনের একটি স্পেশাল টিম নিয়ে আসা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি বাঘটি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রয়েছে।
তথ্য সহায়তা: অরূপকুমার পাল