• হুগলির জলপথ নিরাপদ? মুম্বইয়ের দুর্ঘটনার পর উঠছে প্রশ্ন
    এই সময় | ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • বাংলা এবং মহারাষ্ট্রের দূরত্ব যাই হোক না কেন, মুম্বইয়ের ভয়াবহ ফেরি দুর্ঘটনা চিন্তায় ফেলেছে এ রাজ্যের প্রশাসনকে। মুম্বইয়ে দুর্ঘটনার পর কলকাতার হুগলি নদী জলপথের সুরক্ষা নিয়েও নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী অবশ্য আশ্বস্ত করছেন, ভয়ের কোনও কারণ নেই। পরিবহণ দপ্তর সূত্রের খবর, হুগলি নদী জলপথের সুরক্ষায় একটি রেসকিউ সুপারভিশন সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার।

    উল্লেখ্য, গত বছরের অগস্ট মাসে হাওড়ার শ্যামপুরে হলদিয়াগামী একটি জাহাজকে জায়গা দিতে গিয়ে সোজা নদীর পাড়ে গিয়ে ধাক্কা মারে সিঙ্গাপুরের একটি জাহাজ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কুলপির কাছে দু’টি জাহাজের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। গত এপ্রিল মাসে উত্তরপাড়া ও আড়িয়াদহ ঘাটের মাঝখানে বার্জে ধাক্কা মেরে উল্টে যায় একটি ডিঙি নৌকা।

    রাজ্য পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, মুম্বইয়ের মতোই হুগলি নদীতে অসংখ্য লঞ্চ, স্পিটবোট, ভুটভুটি, দাঁড় টানা নৌকা, মালবাহী বার্জ, ক্রুজ় এবং জাহাজ চলাচল করে। এখন হুগলি নদীতে বছরে প্রায় ৭০০–৭৫০টি বার্জ চলে। তার সঙ্গে রয়েছে ছোট ছোট মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার এবং ভুটভুটি। কিন্তু তাদের সামলানোর জন্য কোনও আধুনিক রিভার ট্র্যাফিক সিস্টেম গড়ে ওঠেনি। অভিযোগ, যাঁরা লঞ্চ, ভুটভুটি, ক্রুজ় এবং বার্জ চালাচ্ছেন তাঁদের অনেকেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। কারও আবার লাইসেন্স পর্যন্ত নেই।

    এ জন্য ‘ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েজ় অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’–র দিকেই আঙুল তুলছেন রাজ্য পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা। পরিবহণ দপ্তরের এক শীর্ষকর্তার ব্যাখ্যা, ‘হলদিয়া থেকে এলাহাবাদ পর্যন্ত (১৬২০ কিমি) গঙ্গা–ভাগিরথী–হুগলি নদী জলপথের দেখভাল করে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্ত সংস্থা ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েজ় অথরিটি অফ ইন্ডিয়া। তারা সেই দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করছে না। তাতেই অসুরক্ষিত হয়ে পড়ছে হুগলি নদী জলপথ।

    ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েজ় অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার এক আধিকারিক বলেন, ‘হুগলি নদীতে হাজার হাজার জলযান চলে। তাদের উপর সারাক্ষণ নজরদারি করার মতো অত লোকবল নেই। কার আছে বৈধ লাইসেন্স আছে আর কাছে লাইসেন্স ‍নেই সেটা চাইলে পুলিশ অথবা পরিবহণ দপ্তর দেখতে চাইতে পারে। এ ব্যাপারে রাজ্য প্রশাসনেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে।’

    পরিবহণ দপ্তরের বক্তব্য, কেন্দ্রের ভরসায় না থেকে তারাই জলপথকে সুরক্ষিত রাখতে গুচ্ছ ব্যবস্থা নিচ্ছে। জানা গিয়েছে হুগলি নদী জলপথের সুরক্ষায় একটি ‘রেসকিউ সুপারভিশন সেন্টার’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। দুর্ঘটনা ঘটলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে সেখানে খবর চলে যাবে। জলযান পরীক্ষার জন্য চালু হবে মোবাইল চেকিং। তার জন্য আরএফআইডি, ভিডিয়ো প্রসেসিং, ইলেকট্রনিক চ্যানেল চার্ট, সিসিটিভি এবং জিপিএস প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হবে। ট্র্যাফিক সার্জেন্টদের মতো হুগলি নদীতে টহল দেবে নজরদারি টিম।

  • Link to this news (এই সময়)