এই সময়: সরকারি হাসপাতাল হোক বা বেসরকারি, পথদুর্ঘটনায় চিকিৎসাধীনদের মৃত্যু হলে সেই তথ্য সরকারি পোর্টালে জানানো বাধ্যতামূলক হলো। লক্ষ্য, ডেথ অডিট। সে মর্মেই বুধবার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। ডেথ অডিটের উদ্দেশ্য শুধু মৃতের নাম–পরিচয় বা আঘাতের ধরন বা মৃত্যুর কারণ জানা নয়। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা এবং দুর্ঘটনার ধরন চিহ্নিত করার পাশাপাশি অকুস্থল থেকে হাসপাতালের দূরত্ব এবং আহতকে নিয়ে আসার সময়টাও বিবেচনা করা এবং সেইমতো আগামী দিনে হাসপাতাল পরিকাঠামো ও দুর্ঘটনা কমানোর ব্যবস্থাপনায় পরিমার্জন আনা।
প্রতি সোমবার সব হাসপাতালকে সংশ্লিষ্ট জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দপ্তরে ডিজিটালি জমা করতে হবে অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ রিপোর্ট সংক্রান্ত সব তথ্য।
গত মাসেই পথদুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর (এসওপি) তৈরি করে দিয়েছিল স্বাস্থ্য দপ্তর। কেন্দ্রীয় ইন্টিগ্রেটেড রোড ট্র্যাফিক অ্যাক্সিডেন্ট (ইরাড) পোর্টাল নিয়ে আয়োজিত একটি বৈঠকে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ডেথ অডিট সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হয় গত সপ্তাহে। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের উপস্থিতিতে শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্যকর্তা, জেলাস্তরের স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং হাসপাতাল কর্তাদের একটি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঠিক হয়, পথদুর্ঘটনায় নিহত এবং তাঁদের চিকিৎসা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য নির্দিষ্ট ফরম্যাটে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরে জমা করতে হবে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মধ্যে।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, ডেথ অডিট হলে ময়নাতদন্তে মেলা তথ্যের চেয়ে অতিরিক্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর মিলবে। তার উপর ভিত্তি করে যথাযথ পরিকল্পনার সাহায্যে পথদুর্ঘটনার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব হতে পারে আগামী দিনে। দেখা হবে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালের দূরত্ব কত? ওই স্থানে কত সময়ের ব্যবধানে দুর্ঘটনা হচ্ছে? কোন ধরনের যানবাহন (বা পথচারী) বেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে? জখমের শরীরের কোন অংশে বেশি প্রাণঘাতী আঘাত লাগছে? সেইমতো স্থানীয় হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ নিয়োগের কথাও ভাববে স্বাস্থ্য দপ্তর।
যদি দেখা যায়, মাথা কিংবা মেরুদণ্ডে আঘাত নিয়ে বেশি আহত ভর্তি হচ্ছেন, তা হলে দেখা হবে, নিউরোলজিস্ট বা নিউরোসার্জেন ওই হাসপাতালে ছিলেন কি না অথবা নিয়োগ সম্ভব কি না।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার কাছাকাছি হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার সেন্টার তৈরি করা নিয়েও নতুন পরিকল্পনা করতে পারে সরকার। সরকারি বিজ্ঞতিতে আরও বলা হয়েছে, জেলা থেকে প্রাপ্ত ডেথ অডিট রিপোর্ট পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরকেও পাঠানো হবে। যাতে হাসপাতালের পরিকাঠামোর পাশাপাশি রাস্তাঘাট মেরামতি ও সেই সংক্রান্ত পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়।