• প্রি-ওয়েডিং ফটোশুটের হাতছানি লালিগুরাস-চারখোলে
    এই সময় | ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সব্যসাচী ঘোষ, মালবাজার

    বিয়ের আর বেশি দেরি নেই। তার আগে যুগলের ফটোশ্যুট। ইদানীং খুবই জনপ্রিয় হয়েছে হাসিমুখকে ফ্রেমবন্দি করার এই পর্ব। প্রি–ওয়েডিং ফটোশ্যুটের জন্য পর্যটকরা বেছে নিচ্ছেন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রিসর্টকে। লাটপাংচার থেকে লালিগুড়াস, চারখোল থেকে চিলাপাতা। অফবিট কোনও লোকেশনই এখন আর ক্যামেরার লেন্সের ঝলকানির বাইরে নেই। প্রচারের আলোর বাইরে থাকা অজস্র নাম–না–জানা এলাকার হোম স্টে–র বাড়তি রোজগারের পথ করে দিয়ে ছবি তোমার নয়া হুজুগ।

    একটা সময়ে শুভদৃষ্টিতে দেখা হতো বর–কনের। পানপাতার আড়াল সরিয়ে বধূর সলজ্জ নয়ন ও হাসিতে আলোময় হয়ে উঠত ছাদনাতলা। সেই যুগ এখন চলে গিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। প্রি–ওয়েডিং ছবি তোলার হিড়িক ক্রমশ বাড়ছে শহর থেকে জেলায়। উত্তরবঙ্গও তার ব্যতিক্রম নয়। পেশাদার ফটোগ্রাফারদের লোকেশন শ্যুটে এখন ‘অফবিট নেচার ক্যানভাস’ উঠে আসছে। শুধু প্রি–ওয়েডিং নয়, বিবাহবার্ষিকী কিংবা বেবি শাওয়ার— নানা গালভরা নামেই মুহূর্তকে উদযাপন করছে পাহাড়ে আসা পরিবার। এ ভাবেই প্রকৃতির সঙ্গেই সম্পৃক্ত হচ্ছে খুশির দিনগুলো।

    শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে যাঁরা থাকেন, তাঁদের এই অফবিট গন্তব্যে চলে এসে ছবি তোলার প্রবণতা গত পাঁচ বছরে যেমন বেড়েছে তেমনই দক্ষিণবঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চলা যুগলরাও নিজেদের ফ্রেমবন্দি করছেন এ সব জায়গায়। পর্যটকদের একাংশ রিসর্ট বা হোম স্টে–তে থাকছেন। আর একটা অংশ সকালে এসে বিকেলে ছবি তোলানোর কাজ সেরে ফিরছেন। তবে এঁরা সকলেই ঘর ভাড়া নিচ্ছেন। ঘন ঘন পোশাক পরিবর্তন, নানা রকম অত্যাধুনিক গ্যাজেট চার্জের ব্যবস্থা ও সেই সঙ্গে খাবারের জন্যও হোম স্টে লাগোয়া এলাকাগুলোই তাঁরা বেছে নিচ্ছেন।

    খরচ একেবারে কম হচ্ছে না। সাধারণ মানের হোম স্টে–তে খাবার–সহ জনপ্রতি খরচ হাজার দেড়েক টাকা। ফটোগ্রাফার অন্তত দু’জন থাকছেন। এ জন্য ১২–২০ হাজার টাকা লাগছে।

    অহলদারা, কোলখাম, পাংবুর মতো এলাকায় এক মাসে অন্তত ১০টি দল আসছে। কালিম্পং জেলার হোম স্টে সংগঠনের অন্যতম কর্মকর্তা বিজয় থাপা বলেন, ‘ফটোশ্যুট আমাদের পর্যটন ব্যবসায় নতুন অক্সিজেন জোগাচ্ছে। যেহেতু ছবির মাধ্যমে সবার মধ্যে এগুলো ছড়িয়ে যাচ্ছে, সেগুলো দেখে অনেকে লোকেশন খুঁজে চলে আসছেন।’ জলপাইগুড়ি শহরের পেশাদার ফটোগ্রাফার কৌশিক দাম বলেন, ‘সাধারণ বাজেটে যাঁরা বিয়ে সারছেন, তাঁদের প্যাকেজেও ডুয়ার্সের নানা লোকেশনে প্রি–ওয়েডিং শ্যুট আমরা করিয়ে নিচ্ছি।’

    মালবাজারের একটি ফটোগ্রাফি সংস্থার মালিক সুমন সূত্রধর বলেন, ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের ইচ্ছে অনেকের থাকলেও সবার সেই সাধ পূরণ হয় না। লোকেশন ফটোশ্যুটে এসে সেই স্বাদ কড়ায়গন্ডায় তাঁরা পুষিয়ে নিচ্ছেন, আমরা যথাযোগ্য সঙ্গত করছি।’

    যাঁদের বিয়ে অনেকদিন হয়ে গিয়েছে, ১০–১৫ বছর তো হবেই, তাঁরাও সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে চলে আসছেন এ সব লোকেশনে। এতে লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে রিসর্ট মালিক থেকে পেশাদার ফটোগ্রাফারদের। কালিম্পং জেলার বুড়িখোলা নদীর ধারে শাল–সেগুনের ছায়ায় রয়েছে বুড়িখোলা হোম স্টে। এখানকার প্রতিনিধি সমীর মণ্ডল বলেন, ‘ফটোগ্রাফারদের রসদ দিতে একাধিক সেলফি পয়েন্ট তৈরি করা হচ্ছে। আলাদা আলাদা ব্যাকড্রপে ছবি তুলতে পর্যটকরা পছন্দ করছেন।’

  • Link to this news (এই সময়)