মিল্টন সেন, হুগলি: রাতারাতি উবে গেছে গ্রামের একমাত্র জলাশয়। হয়েছে বাড়ি। জলাশয় বোঝানো বাকি জমিও ঘিরে জেলা হয়েছে পাঁচিল দিয়ে। সেটাও নাকি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নিশ্চিহ্ন হয়েছে দুই গ্রাম সংযোগকারী ৩২ ফুটের একমাত্র রাস্তা। নিকাশি নালারও হদিস মিলছে না। ঘটনা জানাজানি হতেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতে এবং ভূমি রাজস্ব দপ্তরে।
পরিদর্শনে এসে ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রয়োজনে বুলডোজার চালিয়ে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে গ্রামের চেহারা। ঘটনাটি ঘটেছে পোলবা থানার অন্তর্গত জগন্নাথ বাটি এলাকায়। স্থানীয় গ্রামবাসী বুদ্ধদেব দে জানিয়েছেন, মোট সাড়ে চার বিঘে ওই জমির মালিক ছিলেন স্থানীয় সুবোধ দাস এবং তার পরিবার। জমির অধিকাংশ এলাকা জুড়ে ছিল জলাশয়। আর সংলগ্ন জমিতে ছিলো বাঁশ বাগান এবং বেশ কিছু বড় বড় গাছ। সম্প্রতি হাত বদল হয়ে জমির মালিকানা যায় সংলগ্ন মহেশপুর এলাকার প্রোমোটার তপন মন্ডলের হাতে। তারপরেই লোকজন নিয়ে জলাশয় লাগোয়া বাঁশবাগানের মাটি কেটে জলাশয় ভরাট করে প্রোমোটারের লোকজন।
গ্রামের মানুষ ভয়ে কিছু বলতে পারেননি। তিনি পোলবা বি এল আর ও অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ওই জমি সরকারি খাতায় জলাশয় হিসেবেই রেকর্ড রয়েছে। বুদ্ধদেব বাবুর অভিযোগ, জলাশয় বোঝানো হয়েছে। বাগান কেটে ফেলা হয়েছে। নিকাশি নেই, ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই গোটা এলাকা জলমগ্ন হচ্ছে। রাস্তায় জল জমে কেচকেচি পাড়ায় রাস্তার একটা বড় অংশ ভেঙে গেছে। গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
গত বুধবার ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিক সুগন্ধা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং পোলবা থানার ওসিকে সঙ্গে নিয়ে ওই এলাকায় পরিদর্শনে এসেছিলেন। ম্যাপ দেখে আধিকারিক বলেছেন বিক্রি করা গোটা জমির ৭৫ শতাংশই ডোবা রেকর্ড রয়েছে। স্থানীয়দের আশ্বস্থ করেন জমি আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
স্থানীয় গৃহবধূ পারমিতা দাস বলেছেন, ওই জলাশয়ে তিনি এবং গ্রামের বাসিন্দারা স্নান করতেন। পুকুরে তিনি নিয়মিত বাসন মাজতেন। স্থানীয়রা পুকুরে মাছ ধরত। ডোবা বুঝিয়ে দেওয়ার ফলে এলাকায় জল জমছে। স্থানীয় রীতা শাসমলের অভিযোগ, আম, জাম, কাঠাল, পিটুলি এরকম অনেক বড় বড় গাছ ছিল। বাঁশ বাগান ছিল। সব কেটে নষ্ট করে দিয়েছে। একই অভিযোগ করেছেন কেচকেচি পড়ার বাসিন্দা পূর্ণিমা কেচকেচি। তিনি বলেছেন, হটাৎ করেই এসব হয়েছে।
জগন্নাথ বাটি এবং কেচকেচি পাড়া যোগাযোগকারি ৩২ ফুট চওড়া একটি পঞ্চায়েতের রাস্তা ছিল। পাশে ছিল নিকাশি নালা। বর্তমানে রাস্তা পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। নালার হদিস নেই। প্রোমোটার লোকজন নিয়ে এসে জোর করে এসব করেছে। এই প্রসঙ্গে পোলবা ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আর আই বলেছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বি এল আর ও রাজশ্রী মান্নার নির্দেশে ওই এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে দেখেছেন অভিযোগ সত্য। সরকারি খাতায় এখনও ওই জমি ডোবা হিসাবে রেকর্ড রয়েছে। এছাড়াও আরও অনেক কিছু তাঁর নজরে পড়েছে। তিনি যাবতীয় রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা করে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দিকে এগোচ্ছে প্রশাসন।