• সব মসজিদে মন্দির খোঁজা বরদাস্ত নয়, ভাগবতের হুঁশিয়ারিতে তোলপাড় বিজেপি 
    বর্তমান | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ‘যত্রতত্র রামমন্দির ধাঁচের আন্দোলন শুরু করা যায় না। সবসময়ই যেখানে সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই মন্দির বনাম মসজিদ বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। সবকিছুর মধ্যেই রামমন্দির ইস্যুকে খুঁজে নেওয়ার প্রবণতা একেবারেই বরদাস্ত করা যায় না।’ বিজেপি বা সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কোনও রাজনৈতিক দল নয়, ধর্মনিরপেক্ষ কোনও ব্যক্তি অথবা মঞ্চও নয়, এই হুঁশিয়ারি স্বয়ং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের। তাঁর সাফ কথা, ‘ভারতের সব ধর্মের প্রতি সমান মনোভাবের দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। কীভাবে সকল ধর্ম, বিশ্বাস এবং আদর্শকে সমানভাবে মর্যাদা দিয়ে শান্তি ও সম্প্রীতির উদাহরণ তৈরি করা যায়, সেব্যাপারে ভারতই তো পথ দেখাবে গোটা বিশ্বকে।’


    কাশীর জ্ঞানবাপী, মথুরার শাহি ঈদগা, মধ্যপ্রদেশের ভোজশালা থেকে হালে উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে শাহি জামা মসজিদ কিংবা রাজস্থানের আজমির শরিফ—দেশজুড়ে একের পর জায়গায় মসজিদের নীচে মন্দিরের খোঁজ শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রের পুনেয় ‘বিশ্বগুরু ভারত’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে ভাগবতের হুঁশিয়ারি রীতিমতো তোলপাড় ফেলে দিয়েছে বিজেপিতে। এমনকী তিনি এও বলেছেন, ‘কেউ কেউ মনে করছেন, রামমন্দিরের অনুকরণ করে হিন্দুদের নেতা হয়ে উঠবেন। এটা মানা যায় না। এভাবে হিন্দুদের নেতা হওয়া যায় না।’ এই মন্তব্যের নিশানা যে উত্তরপ্রদেশের গেরুয়াধারী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ স্বয়ং, সেব্যাপারে নিঃসন্দেহ রাজনৈতিক মহল। যদিও যোগী নির্বিকার। ভাগবতের হুঁশিয়ারির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ‘মন্দির ভাঙা হয়েছে’ জিগির তাঁর গলায়।


    বিশ্ব হিন্দু পরিষদ থেকে বজরং দল, বিজেপি কিংবা দুর্গা বাহিনী—সঙ্ঘ পরিবারের প্রতিটি সংগঠনই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হওয়া মন্দির বনাম মসজিদ বিতর্ক নিয়ে হঠাৎ অতি সক্রিয়। আবার ফিরছে উগ্র হিন্দুত্ব ইস্যু। সম্ভল, আজমির নিয়ে মামলা হয়েছে। কখনও সমীক্ষা, কখনও সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটেছে। মধ্যপ্রদেশের ভোজশালা, কাশীর জ্ঞানবাপী, মথুরার ঈদগা মসজিদ নিয়ে আদালতের পাশাপাশি ফের সামাজিক আন্দোলনের পরিকল্পনাও করা হয়েছে। ঠিক এরকমই আবহে হঠাৎ সঙ্ঘ পরিবারের প্রধান চালিকাশক্তি ভাগবতের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে রীতিমতো ধাক্কা লেগেছে বিজেপির অন্দরে। ওই বার্তা যে নির্দেশিকাই, সেটা উপলব্ধি করতেও দেরি হয়নি। বিজেপির একাংশের তাই দাবি, সরসঙ্ঘচালক ঠিকই বলেছেন। ভারতের সর্বধর্মসমন্বয়ের ভাবমূর্তি ও ঐতিহ্য অবশ্যই গোটা বিশ্বকে পথ দেখায়। বিজেপি এমপি দীনেশ শর্মা শুক্রবার সংসদ ভবনে বলেছেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের কোনও মতান্তর নেই। আমরাও মনে করি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই ভারতকে বিশ্বগুরুর স্তরে নিয়ে যাবে।’


    মোহন ভাগবত আরও বলেছেন, ‘রামমন্দির একটি আধ্যাত্মিক আস্থা এবং ধর্মীয় আবেগ। সকল হিন্দুই চেয়েছে যে, রামমন্দির স্থাপিত হোক। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, দেশের সর্বত্র এই একইভাবে বিভিন্ন বিতর্কিত সৌধ কিংবা স্থান উদ্ভাবন করে আবার আন্দোলনে যাওয়া। এই সক্রিয়তার নেপথ্যে রয়েছে সাম্প্রদায়িক শত্রুতার মনোভাব। এদেশে কোনও সংখ্যালঘু নেই। কোনও সংখ্যাগুরু নেই। আমরা সবাই সমান। প্রত্যেকের অধিকার আছে নিজেদের ধর্মপালন করার।’ হঠাৎ এমন ধর্মনিরপেক্ষ বার্তার নেপথ্যে লক্ষ্য কী? সঙ্ঘ কি নতুন কোনও নীতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে? চর্চা তুঙ্গে। 
  • Link to this news (বর্তমান)