• শীতের রাতে ‘খাদান’-জ্বর, রায়গঞ্জের মাল্টিপ্লেক্সে দেবের ছবির প্রথম শো হাউজ়ফুল
    এই সময় | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • কৌশিক সেন, রায়গঞ্জ

    এন্তার লোক। দেদার মজা। বিস্তর হইহই। নতুন কোনও সিনেমার ফার্স্ট ডে, ফার্স্ট শোয়ে এমনটাই হয়ে এসেছে এতদিন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে, ভুল হলো, রাতদুপুরে রায়গঞ্জ সাক্ষী থাকল অন্যরকম ঘটনার। নাকি দৃশ্যের?

    পৌষ-কুয়াশা ভেঙে রায়গঞ্জ শহরের মাল্টিপ্লেক্সের সামনে ভিড়টা জমাট বাঁধতে শুরু করেছিল রাত ১২টার পর থেকেই। তারপরে থিকথিকে সেই ভিড়ের যা বহর দাঁড়াল, তেমনটা নিকট অতীতে অন্তত দেখা যায়নি। শহরের লোকজন অবাক হয়ে বলছেন, ‘খাদান নিয়ে একটা উন্মাদনা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু সেটা যে আড়ে-বহরে এমন চেহারা নেবে, কে জানত!’

    কেউ ‘খাদান’ দেখতে এসেছিলেন ‘খোকাবাবু’ সেজে। কেউ পণ করেছিলেন, যে ভাবেই হোক প্রথম দিনের, প্রথম শো দেখতেই হবে। কেউ কেউ আবার সিনেমা দেখার আগেই খাদানের পোস্টারকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে নাগাড়ে তুলে গেলেন একের পর এক সেল্‌ফি। মাঝরাতে কানফাটানো সিটি-র দোসর ছিল ‘গুরু...গুরু’ চিৎকার!

    দেবের ‘খাদান’-এর শো পাওয়া, না-পাওয়া নিয়ে কয়েকদিন ধরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। খাদানের শো পেতে সমস্যার কথা জানিয়ে সম্প্রতি দেবও সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে লিখেছিলেন, ‘অগ্রিম বুকিং এখনও শুরু হয়নি বলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করছি। তবে শো না-পাওয়ার জন্য দায়ী ভিন্ন ভাষার ছবি।’ অনেকেই মনে করেছিলেন, ‘দেব নাম না করেও পুষ্পা ২-এর দিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন।’

    সম্প্রতি ছবির প্রচার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনবরণ উৎসবে রায়গঞ্জে এসেছিলেন দেব। বৃহস্পতিবার দুপুররাতে রায়গঞ্জের নতুন প্রজন্মের একাংশও দেখিয়ে দিল, কাকে বলে ‘দেব-ভক্তি’! শহরের এক প্রবীণ, বিশ্বজিৎ পাল বলছেন, ‘একটা সময়ে মহানায়ককে নিয়ে আমরাও কম উন্মাদনা দেখাইনি। সব সিনেমা দেখতাম। কিন্তু রাত ২টোয় শো। তা-ও হাউসফুল! রাত জেগে বাংলা সিনেমা নিয়ে শহরের মানুষ উন্মাদনা দেখালো বটে!’

    এর আগে কখনও রাত জেগেছে রায়গঞ্জ?

    শহরের বাসিন্দাদের মনে আছে, গত বছরে শাহরুখ খানের জওয়ান সিনেমার কয়েকটি শো চলেছিল রাত ২টো থেকে। এ শহর ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য রাত জেগেছে। ক্রিকেটে ভারত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে রাতভর জয়ের উদ্‌যাপন করেছে। ১৯৮৮ সালের ১৪ অগস্ট বন্যার জল শহরে ঢুকে পড়ার আতঙ্কে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি রায়গঞ্জ। কিন্তু বাংলা সিনেমা দেখতে হইহই করে রাত জাগা? নাহ্‌, মনে করতে পারছেন না কেউই।

    এত রাতে সিনেমা। লোকজন যাতায়াত করবেন কী ভাবে? সে ব্যবস্থাও আগে থেকেই করে রেখেছিলেন দর্শকেরা। সাইকেল, মোটবাইকের পাশাপাশি অনেকেই এ রাতে বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন টোটোকেই। সব সামাল দিয়ে সারা শহর এই শো দেখতে যে ভাবে হামলে পড়েছিল তাতে শো ‘হাউসফুল’ না হয়ে যায় কোথায়!

    মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষও আয়োজনের কোনও ত্রুটি রাখেননি। দর্শকদের উচ্ছ্বাসে যোগ্য সঙ্গত করার জন্য তাঁরাও বলে রেখেছিলেন ব্যান্ড, তাসা-পার্টি। সব মিলিয়ে, শহরের বাংলা সিনেমাপ্রেমীরা এ দিন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বলেই মনে করছেন অনেকে। শহরের পুরানো সিনেমা হলের মালিকেরাও স্মৃতি হাতড়ে এমন উন্মাদনার কোনও তুলনা দিতে পারেননি।

    রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া সুবর্ণ মণ্ডল বলেন, ‘আমি দেবের বিরাট ভক্ত। গত ১০ ডিসেম্বর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরু এসেছিল। সেদিনই ঠিক করি, আমরা বন্ধুরা মিলে প্রথম দিনের প্রথম শো দেখব। অনেক চেষ্টায় টিকিটও পেয়ে যাই। আমি আগেই অনলাইনে ‘খাদান’ লেখা টি-শার্ট আনিয়ে রেখেছিলাম। তাসা পার্টির বাজনার সঙ্গে এক রাউন্ড নেচে, সিনেমা দেখে ভোরে বাড়ি ফিরেছি।’

    বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক ছাত্র শ্যামল সরকারের কথায়, ‘মাল্টিপ্লেক্সে ঢোকা থেকে প্রতিটি মুহূর্ত সেলিব্রেট করেছি। তবে শুক্রবার ঘুম থেকে ওঠার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে দেরি হয়ে গিয়েছে।’ দেব-দর্শন বলে কথা। হ্যাংওভার থাকবে না, তা আবার হয় নাকি!

  • Link to this news (এই সময়)