সুমন ঘোষ, খড়্গপুর
দূরত্ব ছিল মাত্র দু’কিলোমিটার। কিন্তু রেলের একটা মাত্র সিদ্ধান্তে, তা বেড়ে দাঁড়াল প্রায় ২২ কিলোমিটার! স্বাভাবিক ভাবেই খরচও বেড়ে গেল কয়েক গুণ। যে পণ্য পরিবহণ করতে আগে রেক প্রতি খরচ হতো ৬ লক্ষ টাকা, এখন সেখানে রেক প্রতি প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা গুনতে হচ্ছে! মেদিনীপুর স্টেশন থেকে রেলওয়ে সাইডিং তুলে দেওয়ায়, কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেখানকার প্রায় ৬০০টি পরিবার। আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
মেদিনীপুর শহরের রাঙামাটিতে রয়েছে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার (এফসিআই) গুদাম। পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে খাদ্যশস্য সরবরাহ হয় এই গুদাম থেকেই। রেলের রেকেই খাদ্যশস্য নিয়ে আসে এফসিআই। আগে এই রেক আসত মেদিনীপুর স্টেশনের সাইডিংয়ে। রেক খালি করে খাদ্যশস্য ট্রাকে করে গুদামে নিয়ে যাওয়া হতো।
মেদিনীপুর স্টেশনের এই গুডস শেড থেকে এফসিআই গুদামের দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার। কিন্তু জায়গা পাল্টে খড়্গপুরের গুডস শেড থেকে খাদ্যশস্য আনতে বাধ্য হওয়ায় এখন ২২ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হচ্ছে। অভিযোগ, রেলের তুঘলকি কারবারে এমনই ঘটছে শেষ চার বছর ধরে। রেলের এ হেন কর্মকাণ্ডে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা এফসিআই-কে শেষ চার বছরে নাকি প্রায় ১০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত গুনতে হয়েছে! বিষয়টি নিয়ে রেলমন্ত্রী থেকে রেলবোর্ড, এমনকী প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জানিয়েও সুফল মেলেনি বলে শ্রমিকদের দাবি। এ বার বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
মেদিনীপুর সদর ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সতীশরাজ বালি বলেন, ‘২০২০ নভেম্বর থেকে মেদিনীপুর স্টেশনের গুডস শেডে রেক আসা বন্ধ। রেল বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, গুডস শেডকে ঢেলে সাজা হবে। সাময়িক ভাবে বন্ধ থাকবে রেক আসা। সংস্কারের কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত খড়্গপুর গুডস শেডে এই রেক আসবে। সেখান থেকেই মাল আনতে হবে।’
প্রসঙ্গত, বিজ্ঞপ্তি জারির কয়েক মাসের মধ্যেই মেদিনীপুর গুডস শেডের সংস্কার–কাজ শেষ হয়ে যায়। সকলেই ভেবেছিলেন, এ বার রেক আসবে মেদিনীপুরেই। কিন্তু সেটা হয়নি। মেদিনীপুর রেলওয়ে সাইডিং শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি জামশেদ আলি বলেন, ‘স্থানীয় গুডস শেডে রেক আসা তো দূরের কথা, উল্টে দেখি ঝাঁ চকচকে গুডস শেডে স্টোন চিপস রাখা হলো। খড়্গপুর থেকেই চলছে মাল নিয়ে আসা-যাওয়ার কাজ। ফলে প্রায় ৬০০ শ্রমিক চরম বিপদে। রেল থেকে প্রধানমন্ত্রীর অফিস, সকলকেই জানিয়েছি। লাভ হয়নি।’
ট্রাক ওনার্স অ্যাসোশিয়েশনের নেতা সতীশরাজ বালি ও কমল বিদ, শ্রমিক নেতা জামশেদ আলি খান ও অজয় ঘোষালরা বলেন, ‘গত বছরে অতিরিক্ত ৯৬ কোটি টাকা গুণতে হয়েছে এফসিআই-কে। একদিকে অতিরিক্ত খরচ, অন্যদিকে তীব্র যানজট। সব মিলিয়ে বহু শ্রমিকের কাজ না পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম, তবু মেদিনীপুর সাইডিং কেন চালু হবে না? সে ব্যাপারে আমরা অন্ধকারে।’
অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তা স্বীকার করেছেন এফসিআই-এর মেদিনীপুর ডিভিশনের ডিভিশনাল ম্যানেজার স্বরূপ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমরাও বিষয়টি রেলকে জানিয়েছি। রেল এখানে সাইডিং চালু করলেই আমরা এই গুডস শেড থেকে কাজ শুরু করতে চাই।’ রেলের ব্যাখ্যা, মেদিনীপুর স্টেশনে যাত্রী বাড়ছে। তাই ধীরে ধীরে এখানেও রাতে ট্রেন থাকবে।
তা হলে কি চিরতরে মেদিনীপুর স্টেশন থেকে উঠে যাবে সাইডিং? আপাতত রেলের উত্তর, ‘হ্যাঁ’। এ বিষয়ে রেলের খড়্গপুর ডিভিশনের সিনিয়র ডিসিএম অলোক কৃষ্ণা বলেন, ‘মেদিনীপুর স্টেশনের সাইডিং আর কখনও চালু হবে না।’ কিন্তু কেন? তাঁর ব্যাখ্যা, ‘ওখানে আমরা কোচ স্টেশন বানাব।’
সাইডিং শ্রমিক থেকে ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন তা জানার পরেই ফুঁসে উঠেছে। অ্যাসোসিয়েশনের নেতা জামশেদ আলি বলছেন, ‘এটা ষড়যন্ত্র। এর বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন করব।’