• হ্যাকার হতে সুরাট যাচ্ছিল এইটের ৩ ছাত্র, উদ্ধার তারাপীঠে
    এই সময় | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, আরামবাগ: হ্যাকার হতে হবে, এমন লক্ষ্য নিয়ে ক্লাস এইটের তিন ছাত্র স্কুল থেকে বাড়ি না–ফিরে পালিয়ে গুজরাটের সুরাটে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে গোঘাটের ওই তিন কিশোর ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার আগেই বৃহস্পতিবার রাতে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে বীরভূমের তারাপীঠ থেকে।

    গোঘাট থানার পুলিশ তাদের উদ্ধার করার পর শুক্রবার ওই তিন স্কুলপড়ুয়াকে আরামবাগ মহকুমা আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে নেওয়া হয় তাদের গোপন জবানবন্দি। আপাতত ওই তিন জনকে শিশুকল্যাণ সমিতির (সিডব্লিউসি বা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি) অধীনে রাখা হবে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

    কিন্তু এই বয়সে তাদের মাথায় হ্যাকার হওয়ার ‘ভূত’ কেন চাপল, সুরাটে গেলে হ্যাকিংয়ের কৌশল শেখা যাবে, এই বুদ্ধিই বা তাদের কে বা কারা দিল, সে সব পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

    শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে হুগলি গ্রামীণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃশানু রায় জানান, ওই তিন ছাত্র বুধবার বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। রাত হয়ে গেলেও তারা বাড়ি না–ফেরায় তাদের অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে চার দিকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিন্তু ওই তিন কিশোরকে পাওয়া যায়নি। তখন বাড়ির লোকজন স্কুল কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন। স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফেই গোঘাট থানায় লিখিত ভাবে সবটা জানানো হয়।

    একসঙ্গে তিন স্কুলছাত্রের এ ভাবে আচমকা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে গোটা হুগলি জেলা ও আশপাশের জেলাগুলোর পুলিশকে সতর্ক করা হয়। তিন ছাত্রের খোঁজ পেতে কার্যত আদাজল খেয়ে নামে পুলিশ। শেষমেশ বিশেষ সূত্র মারফত জানা যায়, তারা আছে তারাপীঠে।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্লাস এইটের ওই তিন ছাত্রই মেধাবী। বুধবার বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি না–ফিরে তারা সোজা চলে যায় তারাপীঠে। সেখান থেকেই হ্যাকিং শিখতে তাদের সুরাটে রওনা হওয়ার কথা ছিল বলে পুলিশ জেনেছে। তবে বীরভূম জেলার তারাপীঠে তারা কার কাছে গিয়েছিল, সেখান থেকে তাদের হ্যাকিং শেখার জন্য গুজরাটে পাঠানোর ব্যবস্থাই বা কে করত, সে সব এখনও স্পষ্ট হয়নি।

    কোনও কম্পিউটার সিস্টেমে ঢোকার অনুমোদন নেই, অথচ এক বা একাধিক কৌশল প্রয়োগ করে সিঁধ কাটার মতো সেই সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করে তার নিয়ন্ত্রণ পাওয়াকেই সাধারণ ভাবে হ্যাকিং বলা যায়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃশানু রায় এ দিন জানান, হ্যাকিংয়ের মতো সাইবার বিষয়ক অবৈধ কাজকর্মের প্রতি কিশোর–কিশোরীদের আকর্ষণ দিনকে দিন বাড়ছে এবং এর পিছনে কী কারণ, অল্পবয়সিদের এর থেকে বার করার কী উপায়— এ সবের উপর সচেতনতামূলক কর্মসূচি হবে পুলিশের ব্যবস্থাপনায়। বিশেষ করে যখন মুঠো ফোন ও তাতে ইন্টারনেটের ব্যবহার আটকানো মুশকিল।

    প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন স্কুল–কলেজে সাইবার পাঠশালা শুরু করেছে পুলিশ প্রশাসন। আরামবাগের এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তীর উদ্যোগে বেশ কয়েকটি স্কুলে সাইবার ক্রাইম নিয়ে সচেতনতা শিবিরও হয়েছে। এসডিপিও নিজে স্কুলে স্কুলে গিয়ে ক্লাস নিয়েছেন।

    গোঘাটের ওই তিন ছাত্রের মানসকিতা নিয়ে বিস্মিত স্থানীয়রাও। আরামবাগের বিশিষ্ট সমাজসেবী সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘হ্যাকিং তো সম্পূর্ণ বেআইনি। এ রকম একটা অপরাধ শিখতে ভিন রাজ্যে যাওয়ার জন্য ক্লাস এইটের তিন ছাত্রের বাড়ি ছেড়ে পালানো খুব আশ্চর্যের। ছেলেমেয়েরা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের অপব্যবহার যাতে না–করে, সে দিকে অভিভাবকদের লক্ষ্য রাখতে হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)