• মাঝ আকাশে অসুস্থ মহিলা, প্রাণরক্ষা ডাক্তারের হাতযশে
    এই সময় | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়: গুরুতর অসুস্থ হৃদরোগীকে আপৎকালীন চিকিৎসা দেওয়াটা পেশার খাতিরে রোজকার রুটিনেরই অঙ্গ। কিন্তু সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক কখনও ভাবেননি, মাটি থেকে কয়েক হাজার ফুট উচ্চতায় মাঝ আকাশেও তাঁকে কর্তব্যের খাতিরে একই কাজ করতে হবে।

    ব্রডওয়ে মণিপাল (পূর্বতন সল্টলেক আমরি) হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসক স্মিতা মৈত্র সেই কর্তব্য পালন করেছিলেন বলেই এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন রাজস্থানের বিকানেরের বছর পঁয়তাল্লিশের মহিলা।

    আপাতত ওই রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে জানা গিয়েছে। তৃপ্তির হাসি এখন স্মিতার মুখে। ঘটনাটি গত ৬ ডিসেম্বরের। এতদিন বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি কেউই। অপেক্ষা করছিলেন বিকানেরের মহিলার সেরে ওঠার। এখন তিনি সুস্থ।

    কলকাতা–দিল্লি উড়ানে সে দিন দিল্লি যাচ্ছিলেন স্মিতা। বিকানেরের ওই মহিলা ফ্লাইটে একাই ছিলেন। টেক–অফের মিনিট পনেরোর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা। সঙ্গে প্রবল ঘাম। এয়ারহস্টেস দেখেন, রক্তচাপ ২৪০/১২০।

    শ্বাস–প্রশ্বাসও স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছিলেন না তিনি। নিয়মমাফিক অ্যানাউন্স করে যাত্রীদের মধ্যে কেউ ডাক্তার আছেন কি না জানতে চাওয়া হয়। স্মিতা গিয়ে দেখেই বোঝেন, হাইপারটেনসিভ হার্ট ফেলিয়োরের শিকার মহিলা। একদিকে হার্ট অ্যাটাক, অন্যদিকে রেসপিরেটরি কোলাপস।

    স্মিতা জানান, দেরি না–করে আপৎকালীন চিকিৎসা শুরু করেন। রক্তচাপ কমাতে বিমানে মজুত ফিউরোসেমাইড ইঞ্জেকশন দেন। জিভের নীচে দেওয়া হয় নাইট্রোগ্লিসারিন। হার্টের সম্ভাব্য ব্লকেজ ক্লট গলিয়ে রক্তকে পাতলা রাখতে দেওয়া হয় অ্যাসপিরিন। চলে অক্সিজেনও। বিমানকর্মীদের জানান, যত দ্রুত সম্ভব মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করা জরুরি।

    পাইলট রাঁচির দিকে মুখ ঘোরান বিমানের। রাঁচি বিমানবন্দরে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রস্তুতই ছিলেন। অবতরনের সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাম্বুল্যান্সে করে মহিলাকে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটবর্তী বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে লম্বা চিকিৎসার পর আপাতত সুস্থ তিনি।

    স্মিতা বলেন, ‘ওই রকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মাথা ঠাণ্ডা রেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব জরুরি। ভালো লাগছে যে, আমার শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উড়ান রাঁচিতে নামার আগেই রোগীকে কিছুটা স্থিতিশীল করতে পেরেছি। ডাক্তার হিসেবে আমার সবচেয়ে বড় পাওনা যে আমি ওঁর প্রাণ বাঁচাতে পেরেছি।’

  • Link to this news (এই সময়)