এই সময়, কুলতলি: বাঘের আতঙ্ক থেকে রেহাই নেই কুলতলির। এ বার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসা বাঘের হানায় জখম হলো এক কিশোর। বৃহস্পতিবার সারা রাত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকায় ঘোরাঘুরি করে শুক্রবার ভোরে বাঘটি অবশ্য জঙ্গলে ফিরেছে।
অতীতে জঙ্গল থেকে বাঘ বেরিয়ে এসে লোকালয়ে গবাদি পশু শিকার করে নিজেই জঙ্গলে ফিরে যেত। এ বার তার স্বভাবের কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর তাতেই ঘুম ছুটেছে কুলতলির বাসিন্দা ও বনকর্তাদের।
বৃহস্পতিবার রাতে কুলতলির ব্লকের মৈপীঠ উপকূল থানা এলাকার গুড়গুড়িয়া-ভুবনেশ্বরী গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবীপুরের দাসপাড়ায় বাড়ির সামনে নদী বাঁধের উপর বসে মোবাইল দেখছিল নবম শ্রেণির ছাত্র রাহুল হালদার। আচমকাই সে দেখতে পায় একটি বাঘ তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর চেষ্টা করতেই বাঘটি থাবা বসিয়ে দেয় তার শরীরে। পরনে সোয়েটার থাকায় বাঘের তীক্ষ্ণ নখ শরীরে বড় ক্ষত করতে পারেনি।
রাহুলের আর্ত চিৎকারে পাড়াপড়শি বেরিয়ে আসতেই বাঘটি গ্রাম লাগোয়া নদীর চরে থাকা ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে গা ঢাকা দেয়। জখম কিশোরকে নিয়ে আসা হয় জামতলায় জয়নগর-কুলতলি ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে। রাহুল বলে, ‘বাবা–মা দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করে। আমি খাওয়ার পর বাঁধের উপরে বসে ফোনে বাবার সঙ্গে কথা বলছিলাম। সোয়েটারটা ছিল বলে বেঁচে গেছি।’ রাহুলের দিদি বৈশাখী বলেন, ‘বাঁধের উপরে রাস্তায় কোনও আলো নেই। বাঘের জঙ্গলের দিকে ফেন্সিংও ঠিক মতো মেরামত করা হয় না। যে কারণে প্রতি বছর শীতে বাঘ বেরিয়ে আসছে।’
শুক্রবার সকাল হতেই বাঘের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে বন দপ্তর। ৩০ জন অভিজ্ঞ গ্রামবাসীকে নিয়ে তৈরি করা টাইগার রেসকিউ টিম নিয়ে বন দপ্তরের এডিএফও অনুরাগ চৌধুরী তল্লাশির কাজ শুরু করেন। আসেন সুন্দরবন জীব পরিমণ্ডলের যুগ্ম অধিকর্তা রানা দত্ত ও জেলার ডিএফও নিশা গোস্বামী। দিনভর পায়ের ছাপ অনুসরণ করে দেখা যায়, শুধু গুড়গুড়িয়া-ভুবনেশ্বরী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নয়, তার পাশের মৈপীঠ-বৈকুণ্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নগেনাবাদ, শনিবারের বাজার, বিবেকানন্দ সংঘ–সহ বিস্তীর্ণ ছয় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাঘটি চরকি পাক খেয়েছে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় বাঘটি আজমলমারি তিন নম্বর জঙ্গলে ফেরত চলে গিয়েছে।
বন দপ্তরের ধারণা বাঘটি আজমলমারি এক নম্বর জঙ্গল থেকে বেরিয়ে মাকড়ি নদী সাঁতারে চলে এসেছিল দেবীপুর গ্রামে। তার পর বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘোরাঘুরি করার পর ভোরের দিকে নদী সাঁতরে আজমলমারি তিন নম্বর জঙ্গলে ফেরত গিয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই বাঘ ফেরত চলে যাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে গ্রামবাসীদের। ডিএফও নিশা গোস্বামী বলেন, ‘বাঘটি আজমলমারি এক নম্বর জঙ্গল থেকে এসেছিল আবার সে তিন নম্বর জঙ্গলেই ফেরত চলে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমাদের লোকজন মোতায়েন রয়েছে। রাত প্রহরার ব্যবস্থা হয়েছে। নদীতে চলছে টহলদারি।’