বিনা ডিগ্রিতেই রমরমিয়ে ডাক্তারি! বর্ধমান থেকে গ্রেপ্তার পিতা-পুত্রের জুটি...
আজকাল | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কোনও রকম ডিগ্রি ছাড়াই ডাক্তারি করার অভিযোগ। বর্ধমান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এ কে প্রসাদ ও ডি কে দীপক নামের দুই ব্যক্তিকে। সম্পর্কে তাঁরা বাবা ও ছেলে। ২০১৭ সালে এঁদের একজন পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন। ছাড়া পেয়ে আবার জাঁকিয়ে বসেন পুরনো ব্যবসায়। শুধু ক্লিনিক নয়, ডে-কেয়ার এবং ওষুধের দোকানেও জমিয়ে পশার চলত বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ধৃতদের শনিবার আদালতে তোলা হবে। কয়েক দিন আগেই এক অনুষ্ঠানে বর্ধমানে বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় বেনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক খোকন দাস। এমনকি সিএমওএইচকে ঘেরাও করার হুমকিও দিয়েছিলেন। তারপরই ধরা পড়লেন এই দুই ভুয়ো ডাক্তার।
বর্ধমানের লক্ষ্মীপুরে একটি তিনতলা বাড়ির নিচে বেসমেন্টে ক্লিনিকটির হদিশ মেলে। সেখানে চিকিৎসক হিসেবে একে প্রসাদ ও ডিকে দীপকের নাম লেখা রয়েছে। একে প্রসাদের নামের পাশে 'জেনারেল ফিজিশিয়ান' এবং ডিকে দীপকের নামের 'এমবিবিএস' লেখা রয়েছে। এছাড়াও, অল্টারনেটিভ মেডিসিনে এম.ডি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। এমনকি ভিজিটিং কার্ডে নামের পাশে লেখা থাকে এমবিবিএস চিকিৎসক। এ কে প্রসাদের দাবি, তিনি ছোট থেকে বিহারে পড়াশোনা করেছেন। সেখানেই কলেজে পড়াশোনা শেষ করে সিএমএস, সিডিপি বা কমিউনিটি মেডিকেল সার্ভিস সংক্রান্ত ডিগ্রী অর্জন করেছেন বলে দাবি। কিন্তু, এই ডিগ্রী নিয়ে চিকিৎসা করা যায় কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, তিন তলা বাড়িটি ধৃতদের বলেই জানা গিয়েছে। ক্লিনিকের উল্টোদিকেই রয়েছে একটি ওষুধের দোকান। সেটির পরিচালনা করেন ছোট ছেলে। শুক্রবার পুলিশ গিয়ে দেখতে পায় ওই ক্লিনিকে চিকিৎসার বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা রয়েছে। এমনকি মুর্শিদাবাদ থেকে চিকিৎসা করাতে আসা এক রোগী ১০ দিন ধরে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। রোগীর আত্মীয় সালমা বিবি জানান, তাঁর মায়ের প্যারালাইসিস সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্য তিনি এখানে রয়েছেন। মুর্শিদাবাদের কান্দি এলাকা থেকে চিকিৎসা করাতে এসেছেন। দশ দিন ধরে এই ক্লিনিকেই রয়েছেন তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চিকিৎসার মতো মহান পেশাকে পারিবারিক ব্যবসায় পরিণত করেছে এই পরিবারটি। কোনও রকম অনুমোদন না থাকার পরেও দিব্যি বাবা ও ছেলে মিলে চিকিৎসা করে যাচ্ছিলেন হাজার হাজার রোগীর। এমনকি ভর্তি রেখেও অর্থ উপার্জন করেছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই এই পরিবারটি এই ধরনের ক্লিনিক চালিয়ে আসছে। তাঁদের আদৌ কোনও ডিগ্রী বা অনুমোদন রয়েছে কি না স্থানীয় বাসিন্দারা জানেন না। তবে প্রতিদিন অনেক রোগী এখানে চিকিৎসা করাতে আসেন বলে দেখতে পেতেন তাঁরা। স্থানীয়রা এই বিষয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানোর পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শুক্রবার পুলিশ গিয়ে তদন্ত করে দেখে। পাশাপাশি, চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বা ক্লিনিকের নথি দেখাতে না পারায় ভুয়া চিকিৎসককে আটক করে পুলিশ।
একে প্রসাদ ওরফে অশোককুমার প্রসাদ জেরায় জানিয়েছেন, তিনি আগে একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে সহকারীর কাজ করতেন। এরপরই তাঁর ছেলে বাড়ির নীচে এই ক্লিনিক চালু করে। তারপর থেকে ছেলের ক্লিনিকেই কাজ করেন তিনি। রোগী দেখতেন বলে দাবিও করেছেন। যদিও তাঁর নামের পাশে চিকিৎসক কেন লেখা রয়েছে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম জানিয়েছেন, "বর্ধমানের লক্ষীপুর মাঠে এই ক্লিনিক সম্পর্কে এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ জানিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই অভিযোগের বিষয়ে বর্ধমান থানায় জানানো হয়েছে। উল্লেখিত চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে কী না সেই বিষয়ে মেডিকেল কাউন্সিলকে জানানো হবে। ক্লিনিক বা চিকিৎসাকেন্দ্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বৈধ অনুমোদন রয়েছে কিনা পুলিশ বিষয়টি খোঁজ নেবে।"