হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে এ বার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল দুই তারকা-প্রার্থীর। তবে রাজনীতির যুদ্ধে শেষ হাসি হাসেন তৃণমূলের রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৭৬ হাজারের বেশি ভোটে রচনার কাছে হারতে হয় ওই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। জুন মাসে লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়। মাঝে এতগুলো দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু আবারও শিরোনামে লকেটের পরাজয়ের কথা। কারণ, সদস্যপদ সংগ্রহ কর্মসূচিতে হুগলিতে গিয়ে লকেটের হার নিয়ে প্রকাশ্যেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের উল্লেখ করলেন বিজেপির তারকা-নেতা মিঠুন চক্রবর্তী।
শনিবার হুগলির পান্ডুয়ায় সদস্য সংগ্রহ অভিযানে গিয়েছিলেন মিঠুন। সেখানে সংগঠনের কাজ নিয়ে অনেকেই মিঠুনের কাছে নিজেদের বক্তব্য জানান। দেখা যায়, যেখানে হুগলি সাংগঠনিক জেলায় বিজেপির সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লক্ষ। এখনও পর্যন্ত তা ৫১ হাজারের কাছাকাছি হয়েছে। এতে মিঠুন সন্তুষ্ট নয়, তা তিনি বুঝিয়ে দেন।
সূত্রের খবর, মিঠুন জেলা নেতৃত্বকে জানান, তাঁকে ডেকে এনে প্রচার করানো হবে, তিনি আদা-নুন খেয়ে প্রচারে নামবেন, অথচ জেতা সিট হেরে যাবে—এটা মানা যাবে না। যদিও সাংবাদিক সম্মেলনে মিঠুন বলেন, আগে ফেক মেম্বারশিপ হতো। এখন যা হচ্ছে, সেটা একেবারেই আসল। তবে মিঠুন বলেন, ‘আমি বলে দিয়েছি, কাজ করছে না দেখলে, তুলে ফেলে দেবো। এখানে নো মার্সি।’
এর পরই হুগলির জেতা সিটে হার নিয়ে প্রশ্ন করা হয় মিঠুনকে। কোনওরকম রাখঢাক না রেখে মিঠুন জানান, দলের একাংশ কাজ করেনি বলেই, এই ফল হয়েছে। মিঠুনের কথায়, ‘যতগুলো আমি কেন্দ্র দেখেছি সবকটা বিধানসভাতেই জিতেছে। কিছু জায়গায় হারের একমাত্র কারণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। যেটা খুবই খারাপ।’
মিঠুন যখন সংবাদমাধ্যমে এই কথা বলছেন, তাঁর ডানদিকে বসে লকেট, বাঁ দিকে হুগলি সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি তুষার মজুমদার। তাঁদের চোখ মুখে বিড়ম্বনার ছাপ স্পষ্ট। যদিও পরে তিনি বলেন, জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে উনি তো বলেননি। কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কথা বলা হয়েছে। আর তাও সবক্ষেত্রে নয়। দু’-একজনের ক্ষেত্রে হতে পারে। কিন্তু কারও মধ্যে সমন্বয় নেই, এটা বাজে কথা। আর আমাদের মধ্যে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছিল না। হয়ত কেউ কাজ কম করেছে, কেউ বেশি করেছে। হয়ত কেউ সে ভাবে কাজটা বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই।’
২০২৪-এর লোকসভা ভোটে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে ঝড় তুলেছেন, সেখানে লকেটকে অনেকটা ফিকে মনে হয়েছিল। যদিও অনেকের মনে হয়েছিল, লকেট তৈরি মাটিতে লড়ছেন, আর রচনার প্রথম পরীক্ষা। তাই এই পার্থক্য তো থাকবেই। কিন্তু নেপথ্যে কারণ কি সেটাই ছিল?
বিজেপির জেলা নেতৃত্ব এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও, দলেরই কেউ কেউ লকেটকে নিয়ে খুশি ছিলেন না বলে শোনা গিয়েছিল। বাঁশবেড়িয়ায় এক বৈঠকে লকেটের সঙ্গে কর্মীদের বাদানুবাদের ঘটনাও শোনা গিয়েছিল। যদিও এ নিয়ে বিজেপি প্রকাশ্যে কিছু বলতে চায়নি। তবে সাংসদ হিসাবে লকেটের পাঁচ বছরের কাজের খতিয়ানে দলের অনেকেই অখুশি ছিলেন বলে দলের ভিতরে ভিতরে অসন্তোষের কথা শোনা যাচ্ছিল। ভোটের কাজে অনেকেই নিজেদের সরিয়েও রেখেছিলেন। যদিও সে সময় বারবারই লকেট বলেছিলেন, এ সব তৃণমূলের সাজানো। দ্বিগুণ ভোটে তিনি জিতবেন।
লকেটের ভবিষ্যৎবাণী মেলেনি। হারতে হয়েছে রচনার কাছে। তবে লকেটের হার নিয়ে যে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, ভোটের ফল প্রকাশের এতদিন পর, মিঠুনের বক্তব্যে সেই জল্পনাতেই সিলমোহর পড়ল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।