• ঢালাও খাবার! পোয়াবারো ইঁদুরের উৎপাত শহরজুড়ে
    এই সময় | ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • বছর তিনেক আগে এই ইঁদুরের জন্যেই বিপদে পড়েছিল ঢাকুরিয়া ব্রিজ। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্মৃতিসৌধেও দাঁত বসিয়েছিল ইঁদুর। সপ্তাহ দুয়েক আগে কাশীপুরের রামকৃষ্ণ মহাশ্মশানের (রতনবাবুর ঘাট) বৈদ্যুত্যিক চুল্লির তার কেটে দেয়। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, এক দিন শ্মাশানের দাহকার্য বন্ধ রাখতে হয়েছিল।

    পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, কাশীপুর থেকে বেহালা শহরের সর্বত্রই ইঁদুরের উপদ্রব রয়েছে। এ নিয়ে শুক্রবারই বেহালার ১২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

    বেহালার যদুনগর, জয়শ্রী কলোনি, মদনমোহনতলা, মণ্ডলপাড়া, মামুদপুর, ব্লাইন্ড স্কুল সংলগ্ন এলাকা এবং বড়িশার একাংশে সূর্য ডুবলেই শুরু হয়ে যায় ইঁদুরের দাপট। বেহালার এই সব পাড়া কলকাতা পুরসভার ১২১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। এখানে ফুটপাথের উপরেই বাজার। কোথাও ছড়িয়ে মাছের আঁশ। কোথাও পড়ে আনাজ।

    কচুরির দোকানের থালা ধুয়ে উচ্ছিষ্ট জমিয়ে রাখা হচ্ছে ক্যাচপিটের উপরেই। হোটেলের সামনে ম্যানহোলের উপরে জমছে হরেক পদের অবশিষ্টাংশ। মুদির দোকানের পাশে পড়ে রয়েছে ঝাড়াই বাছাই করা মুড়ি, ডাল, চাল। সন্ধের ফুটপাথে এগরোল, চাউমিনের দোকানের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে খাবারে উচ্ছিষ্টাংশ। এ ভাবেই সকাল থেকে রাত ১২১ নম্বর ওয়ার্ডের জায়গায় জায়গায় ছড়িয়ে থাকে ইঁদুরের খাবারদাবার। স্বভাবতই তাই বেড়েছে ইঁদুরের উৎপাত।

    যদুনগর কলোনির বাসিন্দা উপেন সাহা বলেন, ‘এই ধেড়ে ইঁদুর অনেক বাড়ির ভিতের মাটিও আলগা করে দিচ্ছে।’ মামুদপুরের বাসিন্দা তন্ময় ঘোষালের কথায়, ‘পার্ক, রাস্তা, ল্যাম্প পোস্ট সর্বত্র ইঁদুরের উপদ্রব। যেখানে সেখানে খুঁড়ে মাটি আলগা করে দিচ্ছে।’ যুগযাত্রী ক্লাব সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ঋতম রাউত বলেন, ‘ইঁদুর মুখে করে প্লাস্টিক এনে ড্রেনের মুখ, ম্যানহোল বন্ধ করে দিচ্ছে। দিন চারেক অন্তর এই সব পরিষ্কারের জন্য লোক ডাকতে হয়।’

    ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাড়ায় ঘুরে দেখা গেল, সত্যিই কোথাও দোকানের নীচের মাটি আলগা হয়ে গিয়েছে, কোথাও ল্যাম্প পোস্টের গা ঘেঁষে গর্ত হয়ে রয়েছে। ফুটপাথে জায়গায় জায়গায় পেভার ব্লক উল্টে রয়েছে। কোথাও আবার মাটি আলগা হওয়ায় চারদিক দিয়ে পেভার ব্লক বসে গর্ত হয়ে গিয়েছে। রাতভর ইঁদুর বাহিনীর দাপটের নমুনা ছড়িয়ে রয়েছে ১২১ নম্বর ওয়ার্ডজুড়েই।

    ফুটপাথে চাউমিন, এগরোলের দোকান রয়েছে কমল সাহার। তিনি বললেন ‘এখানকার প্রত্যেক দোকানদার কিন্তু দোকান বন্ধের আগে সব পরিষ্কার করে দেয়।’ কিন্তু কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, হোটেল, কচুরির দোকান, চাউ–এগরোলের দোকান যতই পরিষ্কার করা হোক, তার চারপাশে খাবারের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবেই। ইঁদুরের খাবার খুব কম পরিমাণে দরকার। কলকাতায় রাস্তার পাশে এত খবার ছড়িয়ে থাকে তাতে কয়েক কোটি ইঁদুরের স্বাচ্ছন্দ্যে পেট ভর্তি হতে পারে।

    শুক্রবার পুর অধিবেশনে ১২১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার রূপক গঙ্গোপাধ্যায় ইঁদুরের হাত ওয়ার্ডকে বাঁচাতে মেয়রের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন। মেয়র ফিরহাদ হাকিম তাঁকে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে কাচের গুড়ো ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।

  • Link to this news (এই সময়)