সঞ্জয় দে, দুর্গাপুর
দোরগোড়ায় ক্রিসমাস। কেক ছাড়া যে দিনটির কথা ভাবাই যায় না। ২৫ ডিসেম্বরের আগে ও পরের বেশ কয়েকদিন ধরে চলে কেক–পার্বণ। ইতিমধ্যে বড় বিপণি থেকে শুরু করে পাড়ার মুদি দোকানের শো–কেস হরেকরকম কেকে সাজতে শুরু করেছে। তবে আগের তুলনায় কেকের দাম অনেকটাই বেড়েছে এ বার।
কারণ, কেক তৈরির বিভিন্ন উপকরণের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি। যার জেরে কেক তৈরি করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে বেকারি সংস্থাগুলোর। লোকসান এড়াতে বেশ কিছু বেকারি বড়দিনে কেক তৈরি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে, সিংহভাগ ছোট বেকারির ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাবে আগামী দিনে।
কেক তৈরির প্রধান উপকরণগুলোর মধ্যে ফ্যাট মার্জারিনের দেড় কেজি কার্টুনের দাম চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ছিল দু’হাজার ৪০০ টাকা। ডিসেম্বর মাসে সেটা বেড়ে হয়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। অক্টোবর মাসে ময়দার দাম ছিল প্রতি কুইন্টাল তিন হাজার টাকা। ডিসেম্বর মাসে বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৭০০ টাকা।
অক্টোবর মাসে ১৫ লিটারের রিফাইন তেলের জারের দাম ছিল দু’হাজার টাকা। ডিসেম্বর মাসে বেড়ে হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। চিনির দাম অক্টোবর মাসে ছিল চার হাজার ১০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। ডিসেম্বর মাসে সেটা বেড়ে হয়েছে সাড়ে চার হাজার ৫০০ টাকা। ডার্ক অ্যান্ড হোয়াইট চকোলেট, প্রিমিক্স, ডিম, ক্রিম সব কিছুর দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে।
পশ্চিম বর্ধমান জেলার নামী বেকারিগুলোর মধ্যে অন্যতম প্যারামাউন্ট। ১৯৫৬ সালের সংস্থা। কিছুদিনের জন্য এই বেকারিতে কাজ করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। বর্তমানে সংস্থার কর্ণধার আবু জাফর বলেন, ‘বড়দিনে সবাই কেক খেতে চায়। কিন্তু কেক তৈরির উপকরণের দাম যা বেড়েছে তাতে কেক প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে। এ বছর আমরা দু’টি নতুন কেক তৈরি করেছি। নলেন গুড় ও ড্রাই ফ্রুটের প্রিমিয়াম।’
মূল্যবৃদ্ধির জেরে বড় সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না ছোট বেকারিগুলো। পানাগড়ে এক বেকারির মালিক মহম্মদ সুফিয়ানতুল্লা বলেন, ‘সব কিছুর এত দাম বেড়েছে যে এ বার বড়দিনে কেক তৈরি করছি না। আমাদের বেকারি ছোট। নিজস্ব কোনও আউটলেট নেই। হকারদের নিয়ে ব্যবসা করি। হুগলি ও হাওড়া থেকে কম দামে কেক আসছে এখানে। হকাররা আমাদের কাছ থেকে বেশি দামে কেক কিনতে চাইছেন না।’
একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাঁকুড়া জেলার এক বেকারি সংস্থার মালিক বদ্রিল মিদ্যা। কিন্তু স্থানীয় গ্রাহকদের কথা চিন্তা করে বড়দিনের জন্য অল্প কিছু কেক তৈরি করবেন বলে ঠিক করেছেন বদ্রিল। তিনি বলেন, ‘বেশি টাকা দিয়ে ব্র্যান্ডেড কেক কেনার মতো অনেকের আর্থিক সঙ্গতি নেই। বছরের এই একটা দিনে সকলেরই একটু কেক খাওয়ার ইচ্ছে হয়। তাঁদের কথা মাথায় রেখে অল্প কিছু কেক তৈরি করব।’
কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি পাউরুটির দাম বেড়েছে। কেকের দামও বাড়িয়েছে বহু সংস্থা। তাতে চাহিদা কিছুটা কমেছে বলে জানালেন হুগলি জেলার এক বেকারি সংস্থার কর্ণধার প্রদীপ আগরওয়াল। তিনি বলেন, ‘গ্রাহকরা সস্তায় কেক চাইছেন। কিন্তু কাঁচামালের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে সস্তায় কেক দেওয়া যাবে না। তাই চাহিদা কিছুটা কমেছে।’
কেকের অন্যতম উপকরণ প্রিমিক্স তৈরির একটি বহুজাতিক সংস্থার পূর্বাঞ্চলের মার্কেটিং প্রধান দেবাশিস দাস বলেন, ‘রাজ্য ও কেন্দ্র যদি এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে, তা হলে আগামী দিনে বহু বেকারি বন্ধ হয়ে যাবে। বড় বেকারি সংস্থাগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলা সমেত রাজ্যে একাধিক বিস্কুট কারখানা ও বেকারি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’