চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার
বাবা–মায়ের হাত ধরে ছ’বছরের ছোট্ট মেয়েটা চলে এসেছিল এ পারে। খুব ভোরে বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে মা তাকে বলেছিল, ‘আমরা নতুন দেশে যাব।’ সে বোঝেনি সীমান্ত কী? কাঁটাতারই বা কী? নাবালিকার বাবা–মা ভেবেছিলেন, এ পারে এসে চলে যাবেন বিহারে বা ঝাড়খণ্ডে। সেখানে কোনও ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ, না–হলে কোথাও নির্মাণ কাজে সহকারী হয়ে সুস্থ জীবন গড়ে তুলবেন।
তাঁদের সেই সাধ অবশ্য পূরণ হয়নি। কোচবিহারের দিনহাটায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন দম্পতি। বছর দু’য়েক আগে ওই ঘটনার পর অবৈধ ভাবে সীমান্ত পারাপারের অভিযোগে নাবালিকার বাবা ও মায়ের জেল হয়। এখনও সাজা খাটছেন তাঁরা।
ছোট্ট মেয়েটির নামে কোনও মামলা না হওয়ায় তার ঠাঁই হয়েছিল হোমে। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। অবশেষে আগামী মঙ্গলবার নিজের দেশে ফিরতে চলেছে সে। তবে মা–বাবার হাত ধরে নয়, বিএসএফ আর শিশু সুরক্ষা দপ্তরের কর্মীদের হাত ধরে।
নাবালিকাকে রাখা হয়েছিল কোচবিহার শহিদ বন্দনা হোমে। বাবা–মা ছাড়াই হোমেই বড় হয়ে উঠেছে মেয়েটি। সেখানে অনলাইনে পড়াশোন করেছে। তবে তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা না থাকায় এখন তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফ থেকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে রাজ্যের শিশু ও নারী কল্যাণ দপ্তরে চিঠি এসেছে।
সেখানে বলা হয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ২৪ ডিসেম্বর নাবালিকাকে বাংলাদেশে পাঠানো হবে। তার জন্য তাকে হোম থেকে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, বাবা–মা এ পারের জেলে থাকায় বাংলাদেশ তার আত্মীয়দের কাছেইনাবালিকা এখন থাকবে। ইতিমধ্যে তাদের আত্মীয়দের খবর দেওয়া হয়েছে বিএসএফ ও বিজিবির মাধ্যমে। আগামীকাল সোমবার কোচবিহার থেকে জেলা শিশু সুরক্ষা দপ্তরের এক জন ও হোমের দু’জন আধিকারিক মেয়েটিকে বহরমপুরের সরকারি হোমে নিয়ে যাবেন। সেখানেই রাতে তাকে রাখা হবে।
এরপর জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর –সহ রাজ্যের অন্য জেলার ২৪ জন শিশু ও কিশোরীর সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হবে তাকে। সেখান থেকেই তাদের পাঠানো হবে বাংলাদেশে। কোচবিহার জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক স্নেহাশিস চৌধুরী জানিয়েছেন, নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ২৪ ডিসেম্বর শহিদ বন্দনা হোমে থাকা নাবালিকাকে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হবে। তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে কাজের উদ্দেশ্যে আসা মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই দিন বাড়ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে অশান্তির আবহে অনেকেই ওপার থেকে এ পারে চলে আসতে চাইছেন। কাঁটাতার না থাকায় বহু অরক্ষিত এলাকা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করছে বহু মানুষ। সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় সীমান্তের নিরাপত্তা বাড়ানো হলেও অনুপ্রবেশই অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
দু’বছর আগে বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের দম্পতিও অরক্ষিত এলাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করার সময়ে দিনহাটা সীমান্তে বিএসএফের হাতে ধরা পড়েন। বিএসএফ তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ওই দম্পতির নামে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা হলে জেল হয়। এখনও কোচবিহার সংশোধনাগারে রয়েছেন তাঁরা। কবে বাড়ি ফিরবেন জানেন না। মেয়ে অবশ্য তাঁদের ছেড়েই পাড়ি দেবে বাংলাদেশে। পুরোনো ঠিকানায়। একা একাই।