এই সময়, মালদা: ইংরেজি মাধ্যমের এক নাবালিকা ছাত্রীকে অপহরণের ছ’ঘন্টার মধ্যে উদ্ধার করল মালদা জেলা পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, সোর্স ও উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্তদের। অপহরণের পরে মোটরবাইক নিয়ে এ দিক-সেদিক ছুটে বেরিয়েও পালানোর পথ পেল না দুই অপহরণকারী। মালদা এবং উত্তর দিনাজপুর পুলিশ যৌথভাবে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে। গোটা অপারেশনের নেতৃত্ব দেন চাঁচলের এসডিপিও সোমনাথ সাহা।
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকালে বাড়ি থেকে সামান্য দূরে খেলা করছিল নাবালিকা। সেই সময়ে হেলমেট পরে মোটরবাইকে আসা দুই দুষ্কৃতী তাকে তুলে চম্পট দেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই আশপাশের লোকজন মোটরবাইক নিয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করে। বেলাগাম গতিতে বাইক নিয়ে নিমেষে উধাও হয় দুই যুবক। ফলে শেষ ভরসা পুলিশের কাছে ছুটে যায় পরিবার।
এরপরই সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দুষ্কৃতীদের গতিবিধি লক্ষ করা হয়। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, পরনে জিন্স এবং জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট, মুখ কাপড়ে ঢাকা দু’জন শিশুকন্যাকে মোটরবাইকের মাঝে বসিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে। শনিবার সকাল এগারোট নাগাদ এই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হতেই শুরু হয় হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এবং চাঁচল মহকুমা পুলিশের তদন্ত। এসডিপিওর নেতৃত্বে একটি বিশেষ পুলিশ টিম গঠন করা হয়।
বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু করেন তাঁরা। দেখা যায়, কখনও চণ্ডীপুর আবার কখনও উত্তর দিনাজপুরের রাস্তার দিকে ওই শিশুকন্যাকে মোটর বাইকে চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। বিভিন্ন নাকা পয়েন্টগুলিতে মোবাইলের মাধ্যমে ওই কন্যাশিশুর ছবি দিয়ে সতর্ক করা হয়। মালদার চাঁচলের খরবা এলাকা দিয়েই অপহরণকারীরা ঢুকে পড়ে উত্তর দিনাজপুরে। এরপরই করণদিঘি হয়ে যাওয়ার সময়ে পুলিশের জালে ধরা পড়ে তারা। উদ্ধার হয় অপহৃত শিশুকন্যা।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ব্যবসায়ী রাজু শেখের সঙ্গে অপহরণকারীদের পুরোনো কোনও শত্রুতা রয়েছে। বদলা নিতেই ওই ব্যবসায়ীর মেয়েকে অপহরণ করে টাকা আদায়ের ছক কষেছিল ধৃতেরা। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছে পুলিশ। চাঁচলের এসডিপিও সোমনাথ সাহা জানিয়েছেন, শিশুকন্যা অপহরণে মামলা দায়ের হতেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ–সহ নানা সূত্র ধরে শুরু হয় তদন্ত।
এসডিপিও বলেন, ‘গোটা টিম খুব ভালো কাজ করেছে। করণদিঘি এলাকা থেকে দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ওই শিশুকন্যাকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছে। আদালতের নির্দেশ মেনে ওই শিশুকন্যাকে তার পরিবারে হাতে তুলে দেওয়া হবে। আজ, রবিবার ধৃতদের আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নেবে পুলিশ।’ এদিকে বাড়ির সাত বছরের বড় মেয়ে উদ্ধার হতেই আবেগে তার মা মালা বিবি বলেন, ‘এরকম ভাবে পুলিশ ছুটে গিয়ে মেয়েকে উদ্ধার করবে, সত্যিই ভাবিনি।’
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত মনসুর আলম ও এজাজ আহমেদের বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুরে। ধৃতদের সঙ্গে ওই ছাত্রীর বাবার ব্যবসায়িক লেনদেনে নিয়ে কোনও বিবাদ থাকতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া সাত বছরের শিশুকন্যার নাম আফরোজা খাতুন। তার বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুরের সালালপুর এলাকায়। ওই শিশু কন্যার বাবা রাজু শেখ, পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি বিভিন্ন পার্লার ও সেলুন থেকে চুল সংগ্রহ করার পরে ভিন রাজ্যে সরবরাহ করেন। বর্তমানে রাজু শেখ রাজস্থানের যোধপুরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।