হাজারদুয়ারি, ইমামবড়া তো রইলই, মুর্শিদাবাদে ঘুরতে গেলে চেখে দেখতে হবে এই বিখ্যাত মিষ্টি, যা খেয়ে অবাক বনে গিয়েছিলেন ব্রিটিশরাও...
আজকাল | ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
আজকাল ওয়েবডেস্ক: শীতের আমেজ আর বেলা বাড়লে হালকা রোদ গায়ে মেখে ছুটির মেজাজে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েছেন পর্যটকরা। আর কলকাতার কাছে ঘুরতে গেলে মুর্শিদাবাদের চেয়ে ভাল জায়গা কীই বা হতে পারে। শীত বাড়তেই পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে। হাজারদুয়ারি, কাটরা মসজিদ, ইমামবড়ার পাশাপাশি এখনও মুর্শিদাবাদের অন্যতম আকর্ষণ এখানকার সবথেকে বিখ্যাত মিষ্টি ছানাবড়া। মুর্শিদাবাদে ঘুরতে এলে ছানাবড়া চেখে দেখেন না এমন পর্যটক পাওয়া দুষ্কর। তবে মিষ্টি বিক্রেতার আফসোস, একসময় বর্ধমানের মিহিদানা, কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়ার সঙ্গে স্বাদ এবং গুণমান নিয়ে যে টক্কর চলত তা এখন আর নেই। বাজারে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি চলে আসায় ছানাবড়ার কদর কিছুটা কমেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
তবে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দারা যে কোনও উৎসব অনুষ্ঠানে নিজেদের অতিথিদেরকে আপ্যায়ন করতে পছন্দ করেন এই ছানাবড়া দিয়েই। জানা যায়, একবার মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী ব্রিটিশদের জন্য নিজের বাড়িতে একটি ‘পার্টি’ দিয়েছিলেন। সেই সময় জনৈক পটল ওস্তাদকে তিনি দায়িত্ব দিয়েছিলেন, এমন একটি মিষ্টি তৈরি করার জন্য যা খেয়ে ব্রিটিশ আধিকারিকরা তারিফ করবেন। কথিত আছে, সেই সময়ই পটল ওস্তাদ আবিষ্কার করেন এই ছানাবড়া। এই মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেছেন ভারতবর্ষের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি থেকে শুরু করে লোকসভার বর্তমান বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। মুর্শিদাবাদের এক মিষ্টি ব্যবসায়ী শৌভিক ঘোষের বক্তব্য, ‘অন্য মিষ্টি তৈরির থেকে ছানাবড়া তৈরির জন্য একজন কারিগরের অনেক বেশি সময় লাগে। ছানাকে চিনির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে গোলাকৃতি করে তারপর ঘি অথবা ডালডাতে ভাজা হয়।
তারপর ভিজিয়ে রাখতে হয় মিষ্টির রসে’। রেসিপি শুনতে সোজা লাগলেও এই মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। খুব কম সংখ্যক কারিগরই এই মিষ্টি তৈরিতে পারদর্শী। অল্প আঁচে একটি কড়াইতে ১২০টির মতো ছানাবড়া একসঙ্গে তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘন্টা। বর্তমানে একটু ভাল মানের ছানাবড়ার দাম ১৫-২০ টাকা প্রতি পিস। তবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এখনও যে ছানাবড়ার ভাল বাজার রয়েছে তা স্বীকার করে নেন বহরমপুরের অধিকাংশ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী সমিতির এক সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, কেবলমাত্র বহরমপুর শহরে যত মিষ্টির দোকান আছে সেখান থেকেই বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার কেবলমাত্র ছানাবড়া বিক্রি হয়। তবে এর বেশিরভাগটাই কেনেন মুর্শিদাবাদ জেলার বাইরের মানুষেরা।