• জিনাতকে ধরতে মরিয়া বনকর্মীরা, কাঁপছে বান্দোয়ান, সন্ধ্যা নামলেই রাস্তা ফাঁকা
    বর্তমান | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: চেষ্টা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। দেওয়া হচ্ছে টোপ। কিন্তু, কিছুতেই টোপ গিলছেন না ‘মহারাজ’। তিনি রয়েছেন স্বমহিমায়। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দাদের ঘুম উড়িয়ে এবার পুরুলিয়ায় প্রবেশ করল বাঘিনি জিনাত। বনদপ্তর সূত্রে খবর, শনিবার গভীর রাতেই পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাইকার জঙ্গলে প্রবেশ করেছে জিনাত। তাকে খাঁচাবন্দি করতে সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বনকর্মীরা। বাঘিনির গলায় রেডিও কলার থাকলেও তার বিচরণক্ষেত্রের অধিকাংশ এলাকাই সেডো জোনের আওতায়। ঠিকমতো ইন্টারনেট পরিষেবা কাজ করছে না। ফলে তাকে খুঁজতে দম ছুটছে বনকর্মীদের। 


    পুরুলিয়া জঙ্গলে বাঘিনির প্রবেশের বিষয়টি মানছেন ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম। তিনি বলেন, শনিবার গভীর রাতেই বেলপাহাড়ী জঙ্গল ছেড়েছে বাঘিনি। পুরুলিয়ার কংসাবতী সাউথ ডিভিশনের ডিএফও পূরবী মাহাত বলেন, বাঘটি ঝাড়গ্রাম থেকে পুরুলিয়ায় প্রবেশ করেছে। তবে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। বনদপ্তরের তরফে বাঘিনিকে ধরতে সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে।


    প্রসঙ্গত, নভেম্বরের শেষ দিকে ওড়িশার সিমলিপাল টাইগার রিজ়ার্ভের মুক্ত জঙ্গল থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পার করে ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়ার জঙ্গল এলাকায় এসে পৌঁছয় জিনাত। ঝাড়খণ্ড চষে গত শুক্রবার ভোরে ঝাড়খণ্ড-বাংলা সীমান্তবর্তী ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ীর জঙ্গলে সে প্রবেশ করে। সেখানকার বাসিন্দাদের আতঙ্কে রেখেই এবার জিনাত বান্দোয়ানে। তাতেই ঘুম ছুটেছে বাসিন্দাদের। আতঙ্কে অনেকেই সন্ধ্যার পর ঘরে খিল আঁটছেন।


    বনদপ্তর সূত্রের খবর, রেডিও কলার থেকে পাওয়া সিগন্যালে শুক্রবার বেলপাহাড়ী এলাকার কচুটুয়ার জঙ্গলে বাঘিনির গতিবিধি নজরে এসেছিল বনদপ্তরের। তারপর ভুলাভেদার জঙ্গলে প্রবেশ করে। শনিবার সারাদিন ইন্টারনেট সমস্যার কারণে জিনাতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক করতে পারেনি বনদপ্তর। রাতের দিকে ভুলাভেদা রেঞ্জের কাঁকড়াঝোড় এলাকায় জিনাতের গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়। কাঁকড়াঝোড়ের ময়ূরঝর্ণা, বকডুবির জঙ্গলের সঙ্গেই রয়েছে পুরুলিয়ার জঙ্গল। শনিবার গভীর রাতে ময়ূরঝর্ণার জঙ্গল পেরিয়ে পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ানের রাইকার জঙ্গলে ঢুকে পড়ে সে। যদিও বাসিন্দাদের মধ্যে অহেতুক আতঙ্ক যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেই কারণে বাঘিনির অবস্থান বিশেষ স্পষ্ট করতে নারাজ বনদপ্তর। 


    প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৮ সালেও মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গল এলাকায় বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। বাঘ ধরতে বহু চেষ্টা চালিয়েছিল বনদপ্তর। তবে, বাঘকে নিজেদের বাগে আনতে ব্যর্থ হয়েছিল দপ্তরের কর্মীরা। ওই বছরের ১৩ এপ্রিল লালগড়ের বাঘঘোরার জঙ্গলে বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। শিকার উৎসবে বল্লমের খোঁচায় মৃত্যু হয়েছিল পূর্ণবয়স্ক বাঘের। সেই স্মৃতি কোনওভাবেই যাতে ফিরে না আসে, তার জন্য সতর্ক বনদপ্তর। রবিবার দিনভর রাইকার জঙ্গলে বনদপ্তরের কর্মীদের তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। বাঘিনিকে নিজেদের বাগে আনতে মহিষ, ছাগলের টোপ ফেলছে বনদপ্তর। বাঘ ধরতে ওড়িশার সিমলিপালের বিশেষ দল রয়েছে। তাদের গাইড করছে পুরুলিয়ার বনদপ্তরের কর্মীরা।  এদিন বান্দোয়ানেই ছিলেন কংসাবতী দক্ষিণের ডিএফও পূরবীদেবী। তিনি বলেন, বান্দোয়ানের জঙ্গল লাগোয়া সমস্ত এলাকায় বাঘের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সকাল থেকেই জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় মাইকিং চলছে। বাসিন্দারা যাতে সতর্ক থাকেন, সন্ধ্যার পর বাড়ির অহেতুক বাইরে না বের হন, সেই ব্যাপারে অবগত করা হয়েছে। 


    ( বাঘিনি ধরতে হাজির বনকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)