• সামনেই বড়দিন, আলোয় সাজছে গির্জা, মূল আকর্ষণ পাঁচ কুইন্টাল ওজনের ঘণ্টা
    বর্তমান | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: কয়েকদিন পরেই ক্রিসমাস। সাজো সাজো রব চারিদিকে। আর বড়দিন উপলক্ষ্যে সেজে উঠছে ইংরেজদের প্রতিষ্ঠিত রামপুরহাটের চার্চ। প্রাচীন এই চার্চের মূল আকর্ষণ ড্রেনমার্কের পাঁচ কুইন্টাল ওজনের বিশাল ঘণ্টা। আলোর রোশনাই ও যিশুকে শ্রদ্ধা জানাতে বড়দিনে কয়েক হাজার শিশু ও তাদের অভিভাবকদের ঠিকানা হয়ে উঠবে এই চার্চ।  


    ইংরেজ আমলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিস্তার লাভ করছিল খ্রিস্টধর্ম। রামপুরহাট সেই প্রভাব বহির্ভূত ছিল না। সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছে রামপুরহাট চার্চ। রামপুরহাটে খ্রিস্টধর্ম প্রচার শুরু হয়েছিল এইচ এম ক্যাম সাহেবের উদ্যোগে। তিনিই ১৯০২ সালে রামপুরহাটের রেলপাড়া এলাকায় ৩৬ টাকায় আড়াই বিঘে জমি কিনে (বর্তমানে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড) চার্চের প্রতিষ্টা করেন। ডেনমার্ক থেকে বিভিন্ন ধাতু দিয়ে তৈরি পাঁচ কুইন্টাল ওজনের বড় ঘণ্টা নিয়ে আসেন। সেটি এখন ঘণ্টাঘর নামে পরিচিত। এই ঘণ্টাই গির্জার বড় আকর্ষণ। বড়দিন, গুড ফ্রাইডে, নিউ ইয়ার্স ও নিত্যদিনের প্রার্থনার সময় আজও সেই ঘণ্টা বাজানো হয়। একটা সময় সেই ঘণ্টার আওয়াজ দূরবর্তী বহু গ্রাম থেকে শোনা যেত। এখন অবশ্য নগরায়নের ফলে সেই আওয়াজ শোনা যায় না। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চার্চ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শ্রীনাথ বিশ্বাস। বর্তমানে তাঁর বংশধররা পরিচালনা করে আসছেন। আগে প্রতিবছর বড়দিনে ডেনমার্ক থেকে লেবারেল এঙ্গেন সাহেব পরিবার নিয়ে এই চার্চে প্রভু যিশুকে শ্রদ্ধা জানাতে আসতেন। সঙ্গে আনতেন মোমবাতি, কমলালেবু, কেক ও শীতের গরম পোশাক। চার্চে প্রার্থনা করতে আসা মানুষের হাতে তুলে দিতেন। বছর ২০ আগেও তাঁর বংশধরেরা চার্চ ঘুরে যান। এখানে বহু বিশিষ্টজন ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন।  


    শতাব্দী প্রাচীন এই চার্চে এখনও পুরনো প্রভু যিশুর ক্রস, প্রার্থনা ঘর, টেবিল এবং প্রার্থনা করার ডেস্ক রয়েছে। পুরনো সীমানা প্রাচীর ভেঙে যাওয়ায় টিআরডিএর পক্ষ থেকে ১৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেই টাকায় গির্জার প্রাচীর, গেট ও কালচারাল স্টেজ নির্মাণ হয়েছে। শুরু থেকেই বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সঙ্গে খ্রিস্টানদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রেখে চলেছে এই চার্চ। বর্তমানে বড়দিন থেকে শুরু করে ইংরেজি নববর্ষ পর্যন্ত সময়ে বহু উৎসব প্রিয় মানুষের গন্তব্যস্থল হয়ে ওঠে প্রাচীনতম এই গির্জা।


    ২৬ বছর ধরে এই গির্জার ফাদার রয়েছেন অতীশ বিশ্বাস। তিনি বলেন, বড়দিন আমাদের জীবনে অনেক শুভকামনা নিয়ে আসে। কেকের সুগন্ধের মতোই সুন্দর হয়ে ওঠে সকলের জীবন। আনন্দে ভরে উঠবে এজগৎ। ওইদিন মধ্যরাতে প্রার্থনার পাশাপাশি সকাল ন’টার সময় ঘণ্টা বাজানো হবে। তখন শিশুদের মধ্যে কমলালেবু, কেক ও চকোলেট বিতরণ করা হবে। এছাড়া সকাল সাড়ে দশটা থেকে শুরু হবে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 


    প্রতিবছর নিয়ম করে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় সহ পুলিস প্রশাসনের কর্তারা প্রভুকে শ্রদ্ধা জানাতে এই চার্চে আসেন। আশিসবাবু বলেন, শুধু খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী মানুষ নন, যিশুকে শ্রদ্ধা জানাতে নানা ধর্মের মানুষের আনাগোনায় এক মিলন ক্ষেত্রে পরিণত হয় এই চার্চ। 


    বিশাল এলাকা জুড়ে গির্জা। রয়েছে বাগান। পুরো চত্বর সুন্দর ও নানা আলোয় সাজিয়ে তোলা হবে। বড়দিনের উৎসব উপলক্ষ্যে গির্জার বাইরে ছোটখাটো মেলাও বসে। বড়দিন থেকে শুরু করে ইংরেজি নববর্ষ পর্যন্ত সময়ে বহু উৎসব প্রিয় মানুষের গন্তব্যস্থল হয়ে ওঠে প্রাচীনতম এই গির্জা। 
  • Link to this news (বর্তমান)