সংবাদদাতা, হলদিয়া: দুধপুলি, মালপোয়া, পাটিসাপটার মিষ্টি গন্ধে ম ম করছে চারদিক। তাদের সঙ্গত করছে শীতের মনোরম আবহওয়া। কাঁসার থালায় কলাপাতার উপর সাজানো রয়েছে থরে থরে পিঠেপুলি। কেউ পিঠে সাজিয়েছেন সুদৃশ্য মাটির থালা-বাটিতে, কেউ আলপনা আঁকা বাঁশের রঙিন কুলোয়। পিঠে দিয়েই তৈরি বাংলার কুটির, বাংলার মাঠঘাট, বাংলার প্রকৃতি ও পরিবেশ। মহিলাদের পরনে লালপাড় গরদের শাড়ি। পিঠেপুলির প্রতিযোগিতা ঘিরে এমন আয়োজন যে কোনও বাঙালিকে মোহিত করে দেবে। রবিবার শীতের বিকেলে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে তাম্রলিপ্ত লোকসংস্কৃতি উন্নয়ন সমিতি। ওই সংস্থার উদ্যোগে দু’ ‹দশক ধরে মহিষাদলের বাসুলিয়া গণমৈত্রী ময়দানে বড়মাপের লোকসংস্কৃতি উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। এবার ১৬ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই উৎসব হচ্ছে। প্রতি বছরই শীতের শুরুতে বড়দিনের সময়ে ওই উৎসব ঘিরে মেতে ওঠেন মহিষাদলের মানুষ। হলদিয়া, তমলুক, নন্দকুমার থেকে মানুষ ভিড় করে মেলায়। পিঠেপুলি প্রতিযোগিতা ওই লোকসংস্কৃতি উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তমলুক ও হলদিয়া মহকুমার পাঁচ-ছ›টি ব্লকের মহিলারা অংশ নেন পিঠেমেলায়। এবারও এসেছিলেন শতাধিক মহিলা প্রতিযোগী। দর্শনার্থীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উন্মাদনা। প্রতিযোগিতার সঙ্গে থাকে পিঠেপুলি বিক্রির ব্যবস্থাও। পিঠেপুলির স্বাদের টানে ভিড় বাড়ে। উৎসব কমিটি পিঠেপুলি প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীকে সোনার গয়না পুরস্কার তুলে দিয়েছেন। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানাধিকারীকে দেওয়া হয়েছে রুপোর গয়না। বাকি প্রতিযোগীরাও পেয়েছেন স্বান্ত্বনা পুরস্কার। এদিন পিঠে মেলায় অংশ নিয়ে দারুণ খুশি শম্পা সাঁতরা, মৌসুমী মাইতিরা। তাঁরা বলেন, সারা বছর ধরে এই মেলার অপেক্ষায় থাকি। লোকসংস্কৃতি উৎসবের আরও দু›টি আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতা হবে সোমবার। তিন বছর পর্যন্ত বয়সের ছেলেমেয়েদের জন্য কৃষ্ণ সেজে ননী চুরি প্রতিযোগিতা এবং পৌরাণিক চরিত্রের অনুকরণে ছদ্মবেশ।
সংস্থার সভাপতি অমলেন্দু অধিকারী ও সম্পাদক ফণীভূষণ কুইল্যা বলেন, বাংলার নানা প্রান্তের লোকসংস্কৃতিকে আজকের প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই এই উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতি বছরই আলাদা আলাদা জেলার লোকশিল্পীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। রাত জেগে নানা বয়সের মানুষ লোকশিল্পীদের পরিবেশনা উপভোগ করেন। লোকগান, লোকনৃত্য দেখতে ভিড় হচ্ছে সন্ধে থেকেই। দিনের বেলা আয়োজন করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের লোকক্রীড়া। এবার কবিগান, মহিলাদের জন্য রঙ্গোলি প্রতিযোগিতা, শ্রীখোল প্রতিযোগিতা, ছৌ নাচ, মাউথ অরগ্যানে লোকসংঙ্গীতের সুর বাজানো, ধুনুচি নাচ, বাঁকুড়ার লোকগান, বাউল, মালদহের গম্ভীরা, গাজন যাত্রা মাতিয়ে দিয়েছে দর্শকদের। এছাড়াও ছিল কয়েকদিন ধরে পৌরাণিক যাত্রাও। উৎসবের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা আশিস খাঁড়া বলেন, গ্রাম বাংলার লোকসংস্কৃতি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রতিবছর আমাদের শিকড়কে ফিরে দেখার ব্যবস্থা করি। লোকজীবনের নানাদিক, গান, নাচ, প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। মহিষাদলে একটি স্থায়ী লোকসংস্কৃতি সংগ্রহশালা গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এই সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে চাই। এজন্য বহু উপাদান ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছে।-নিজস্ব চিত্র